আরইবি-পল্লীবিদ্যুৎ দ্বন্দ্বে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিচ্যুতি ও দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্দোলন চলছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) অধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোয়। ইতিমধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগে ইতিমধ্যে ঢাকা ও কুমিল্লায় সমিতির অন্তত ১৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারী কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে দীর্ঘদিনের যে দ্বন্দ্ব সেটি এখন বড় আকার ধারণ করেছে। দুপক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার ঘটনায় আরইবি পরিচালক (প্রশাসন) মো. আরশাদ হোসেন খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সমিতির কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন। গত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের মদদে বিদ্যুৎ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
এদিকে মামলা-হয়রানির ভয়ে সমিতির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে দাপ্তরিক কাজ বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি বড় ধরনের গ্রিড বিপর্যয় এবং গ্রাহক ভোগান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুপক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তিতে সুপারিশ করতে নাগরিক কমিটি গঠন করেছে ক্যাব। অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে আজ রবিবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে সমিতির আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
অপরদিকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাশাপাশি আরইবি সংস্কার দাবি করে তারা বলেন, সংস্কার না হওয়া রপর্যন্ত ছাত্র সমন্বয়কসহ স্বাধীন কমিশন গঠন করা পল্লীবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অস্থিতিশীলতার সৃষ্টির জন্য আরইবিকে দায়ী করে পল্লীবিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও স্ট্যান্ড রিলিজ এবং সংযুক্ত দুজনকে পদায়ন করা; গ্রাহকের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সমিতি ও বোর্ড সংস্কার করে একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করা এবং স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিকদের নিয়মিত করা।
পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক মো. সালাউদ্দীন বলেন, আমরা ন্যায্য দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছিলাম। একপর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করা হয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত এবং ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয় আরইবি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন পল্লীবিদ্যুতের কর্মীরা। বিচ্ছিন্ন এই ঘটনার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু এরপরও পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা, চাকরিচ্যুত এবং গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমান সরকারের পক্ষে দাবি করে সালাউদ্দীন অভিযোগ করেন, আরইবির কিছু কর্মকর্তা এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নে নেমেছেন। এতে বিদ্যুৎ খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। আমরা স্থিতিশীল পরিবেশে কাজ করতে চাই।
এসব বিষয়ে জানাতে আরইবির চেয়ারম্যান, দুজন সদস্য এবং একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।
এ বিসয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী মাহফুজ আলম বলেন, ইতিমধ্যে তাদের (পল্লীবিদ্যুতের) কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, বাকিগুলোর বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে। যেকোনো দাবি জানানোর জন্য সরকারের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। আমরা যেটা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেটা মাঠে না গড়ানোই ভালো।
জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের শঙ্কা
বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে আরইবিসহ ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে সরবরাহ করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি। বিদ্যুতের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন কেন্দ্রকে উৎপাদনে নির্দেশ দেয় তারা। বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। কোনো কারণে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম বা বেশি হলে ফ্রিকুয়েন্সির স্বাভাবিক ঠিক থাকে না। তখন গ্রিড বিপর্যয় হয়ে সারা দেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়তে পারে। বৃহস্পতিবার সমিতিগুলো বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকটা এমন বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে একবারে সবগুলো সমিতির সরবরাহ বন্ধ না করায় ভারসাম্য রাখতে দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দেয় পিজিসিবি।
জানতে চাইলে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল মোনায়েম চৌধুরী বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে আরইবি দেশের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তারা যদি সময় নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে তাহলে সেটা সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু একসঙ্গে যদি হঠাৎ দেড়-দুই হাজার মেগাওয়াট লোড কমিয়ে দেয় তখন ‘ফ্রিকুয়েন্সি’ নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। তিনি বলেন, তবে আশা করি তারা এটা করবে না।
সূত্র: দেশ রূপান্তর