রাসেল টি আহমেদ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে বাধ্য হয়ে পদত্যাগের পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সংগঠনটির সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে বেসিসকে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করে সংগঠনটিতে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠন বেসিস এখন দুর্বৃত্তদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সংগঠনটির ইসিতে রয়েছে পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর এবং তাদের প্রেতাত্মারা। তারা এই সংগঠনটিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ব্যবহার না করে নিজেদের ভাগ্যউন্নোয়নে ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদের সহযোগী হয়ে এরা সীমাহীন লুটপাট চালিয়ে গেছে। এমনকি আগস্টে ছাত্র জনতার হত্যার সময় এরা ৩রা আগস্ট বেসিসে অনুষ্ঠান করে বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে বাংলাদেশে কোনো সমস্যা নেই।
মানববন্ধনে ছাত্ররা অবিলম্বে বেসিস সভাপিতে পদত্যাগের আহ্বান জানান। অন্যথায় তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। ছাত্ররা বলেন, ছাত্র জনতার হত্যা নিয়ে বেসিস একটি বিবৃতি পর্যন্ত দেয়ার সাহস করেনি। কিন্তু তাদের এক দোসরকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তারা সংগঠনের পয়সা খরচ করে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করার দু:সাহস দেখিয়েছে। যা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডকে নীচু করে দেখার প্রয়াস। ছাত্ররা বেসিসকে ব্যবহার করে দুবৃর্ত্তপনায় অংশ নেওয়া প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ছাত্রদের পক্ষ থেকে মুস্তাক তাহমিদ বর্তমান সরকারের কাছে ৩টি দাবি পেশ করেন। তারা স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত BASIS গঠনে আইটি খাতকে শক্তিশালী করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। দ্বিতীয় দাবিতে বলেন, জুলাই গনঅভূথানে ছাত্র হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে অনতিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া BASIS এ একজন প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে বেসিসের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে পদত্যাগের অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেড অর্গানাইজেশনেও পাঠিয়েছেন বেসিসের টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত এ সভাপতি। তিনি নিজেও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রাসেল টিম আহমেদ ২৪ বছর ধরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ করছেন। গত ১২ বছর তিনি বিভিন্ন মেয়াদে বেসিসের কার্যনির্বাহী বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২-২৪ মেয়াদে প্রথম দফায় তিনি বেসিস সভাপতি নির্বাচিত হন। চলতি বছরের ৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করেন।
এদিকে পদত্যাগপত্রে রাসেল টি আহমেদ তার দুই মেয়াদকালে নিজের সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। নিচের দিকে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘দেশের ভীষণ সংবেদনশীল সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরিবর্তে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। এতে আইসিটি খাতে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন করে আসা বেসিসের সর্বশেষ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এতে বিশ্বে সফটওয়্যার শিল্পে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
পদত্যাগের কারণ জানিয়ে রাসেল টি আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘শুধুমাত্র বেসিস সভাপতি আমি এ পরিচয়ের কারণে নিকট অতীতের নানা ঘটনায় আমাকে নামে-বেনামে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমাকে ও আমার সন্তানদের জড়িয়ে ভীতিকর মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা আমার জন্য অকল্পনীয় এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আশঙ্কাজনক। এজন্য বেসিসের সভাপতি ও পরিচালনা বোর্ডের পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’