ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পুলিশ ও প্রশাসনকে 'ম্যানেজ' করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজনের সহায়তায় তিনি সেখানেই গোপনে অবস্থান করছেন। সেখানকার একটি ভবনের সম্মেলনকক্ষে হারুন অর রশিদ বসে রয়েছেন — এমন একটি ছবি হাতে এসেছে। একটি সূত্রের বরার দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
সূত্রটি জানিয়েছে, ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পেয়ে তার স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। সে সূত্রে তারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকায় গণঅভ্যুত্থানের পর হারুন অর রশিদ নিউইয়র্ক স্টেটের লং আইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে লাখো জনতা ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে শহীদ মিনার ও গণভবনের দিকে জনতার ঢল এগোতে থাকে। ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল ব্যানার টানানো ছিল। উত্তেজিত জনতা ভবনটির উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্যানারটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং মূল ফটক আটকে দেওয়া হয়।
জনতা ভবনের প্রাঙ্গণে ঢুকতে না পারলেও বাইরে থেকে ইট ছুঁড়ে মারতে থাকে। প্রাণভয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলেন এবং সাধারণ পোশাক পরে ১৩ ফুট উঁচু দেওয়াল টপকাতে শুরু করেন।
ডিআইজি হারুন অর রশিদও একই কায়দায় দেওয়াল টপকাতে গিয়ে গুরুতর আঘাত পান। পায়ে ও শরীরের নিচের অংশে ব্যাপক আঘাত নিয়ে তিনি আইজিপির সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরে চলে যান। বিকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেওয়াল টপকে প্রাণে বাঁচেন।
ওই রাতে তিনি কোথায় ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র জানায়, তিনি কূটনৈতিক এলাকায় একটি দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হারুনের স্ত্রী ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকার ভিসা পান। বৈধ ভিসা থাকার কারণে তিনি আমেরিকা পালানোর চেষ্টা করেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে বিমানবন্দরে নিরাপদে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা চান।
তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দূতাবাস তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। বিকেলে পুলিশের বিশেষ অস্ত্র ও কৌশল বাহিনীর (সোয়াট) একটি গাড়ি তাকে মিরপুরের একটি জায়গায় দিয়ে আসে। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। গাড়িতে করে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান।
তবে টার্মিনালে ঢোকার আগেই জনতা তাকে চিনে ফেলে এবং মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সরকার পতনের পর অন্তত ১৮৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতির কারণে বরখাস্তের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম। সাংবাদিকেরা পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদেরকেই তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
২০১১ সালে জাতীয় সংসদের সামনে এক মিছিলে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে মারধরের ঘটনায় প্রথম আলোচনায় আসেন হারুন অর রশিদ। এরপর থেকে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তার নাম আসে। ডিবিতে মানুষকে তুলে নেওয়া, বিরোধী দলের আন্দোলনে 'বোমা উদ্ধারের' প্রহসন, হেফাজতে নির্যাতন, আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় — ইত্যাদি অভিযোগে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন।