ঢাবি শিবির সভাপতিকে নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম
সাদিক কায়েম
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। কোনো ধরনের প্রকাশ্য কার্যক্রম ক্যাম্পাসে ছিল না। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাদিক কায়েম গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নিজেকে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে দাবি করেছেন। এরই মাধ্যমে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। পোস্টটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুকে এরপর থেকে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিবিরের এই শীর্ষ নেতাকে বেশ সরব দেখা গিয়েছে। এজন্য তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলেন আসেন।
আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম ঢাবির শিবির সভাপতি হিসেবে সাদিক কায়েম হঠাৎ প্রকাশ্যে আসায় এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘সাদিকের শিবিরের সভাপতি ঘোষণা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, আপত্তি যে সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ছাত্রদের সাথে ও জনতার ঈমানের প্রতি বেঈমানি করেছে। সমন্বয়করা অরাজনৈতিক জেনেই তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে সবাই। শিবিরের কারো ডাকে সাড়া দেয়নি। ছাত্রদের মধ্যে বাদবাকী কেউ শিবির থেকে থাকে তারাও ঘোষণা দিয়ে বের হয়ে যাক। অন্য দলের থাকলেও বের হয়ে যাক। এ ধরনের কাজ মোনাফেকি কাজ কারবার। সাদিক নিজে মোনাফেক, তার পরিচয় গোপন রেখে জামায়াত ও দল হিসেবে জাতির সাথে মোনাফেকি করেছে বলে আমি মনে করি।’
তবে ডা. বিষয়টি বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন পিনাকী ভট্টাচার্য। ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতি প্রকাশ্যে শুরু হলে বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। ফেসবুকে তিনি লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনীতি মুক্ত করার চক্রান্তের মুখে সাদিক কায়েম খুবই সঠিক পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড নিয়েছেন। ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতি প্রকাশ্যে শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেয়া যাবে। ছাত্র রাজনীতিকে ভিলেইন বানানোর সুশীল চক্রান্ত আমাদেরকেই রুখে দিতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের ছাত্ররা একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিরোধের শক্তি। এই শক্তিকে নির্বীর্য করে দেয়ার চেষ্টা অনেক দিন থেকে চলছে। সকল ছাত্র সংগঠন তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে সচল করুক। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনি উৎসব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখরিত হোক।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, একটা স্ট্যাটাস লেখার জন্যে দুপুর থেকেই চিন্তা করছিলাম, বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠার মতো অবস্থা হয়েছিলো আমার সিদ্ধান্তের। এক ফুট উঠে, তো আবার দুই ফিট স্লিপ করে নিচে নামে। স্বভাব যেহেতু এ ধরনের মতামত চেপে রাখার বিপক্ষে, তাই আমিও আর চেপে রাখতে পারলাম না। তৈলাক্ত বাঁশটা পার করেই ফেললাম।
তিনি আরও লেখেন, ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে। পরিচয় জুলাইয়ের ২৫ তারিখ থেকে। তারপর নিয়মিতই কথা হতো। আমার খুব কাছের বন্ধুদের একটা নেটওয়ার্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমন্বয়ককে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করে। মূলত সালমানের সাথে কো-অর্ডিশন করেই সব আয়োজন করা হয়। বয়সে বেশ ছোট সালমানের সাথে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমার ও আমার বন্ধুদের। ডিবি কার্যালয় যখন সমন্বয়কদের শীর্ষ নেতৃত্ব আটক, তখন সালমান ও অন্যান্য সমন্বয়করা পুরো আন্দোলনের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিরাপদ আবাসে থাকা সবার সাথেই আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো, সত্যি বলতে কী সালমানের পুরো পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে আমি বেশ অবাকই হচ্ছিলাম। কতইবা বয়স তার হয়তো ২৪/২৫ হবে, তারপরও এই ছেলে যেভাবে সকল পরিস্থিতি আমার বন্ধুদের পরামর্শে ম্যানুভার করেছে এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সব স্ট্রাটেজিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
তিনি আরও লেখেন, এই তো কয়েকদিন আগেই কথা হলো সালমানের সাথে, কোনো পরিবর্তনই নেই ছেলেটার মধ্যে, নিরহংকার সেই একই সালমান। অন্য সকল সমন্বয়কদের থেকে সালমান ও কাদের এই দুটো ছেলে একেবারেই ভিন্ন। দুজনের নেতৃত্বই অত্যন্ত বলিষ্ঠ। তো আজকে দুপুরে জানলাম সালমানের প্রকৃত নাম সাদিক কায়েম এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ না পেয়েও শিবির যে সালমানের (আমার কাছে সে সালমানই থাকবে) মতো একটা নেতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তার জন্যে সাধুবাদ জানাই। ছাত্র রাজনীতি সুষ্ঠু ধারার গণতন্ত্রের জন্যে অত্যাবশ্যক এবং তার সদ্ব্যবহার করে যে কোন রাজনৈতিক দলই যদি সালমান কিংবা কাদেরের মতো তরুণ-তরুণীদের এত ম্যাচিউরড নেতা/নেত্রী হিসেবে তৈরি করতে পারে, তাহলে মন্দ কি?
তবে তিনি একই পোস্টের কমেন্টে লেখেন, একটা বিষয় ক্লারিফাই করি, সালমান যদি তখন আমার সাথে শিবিরে বা অন্যকোন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে যোগাযোগ করতো, তখন আমি কিছুতেই আমার বিশ্বস্ত বন্ধুদের কাছে তাদের পাঠাতাম না। এর মধ্যে জড়িতই হতাম না। কিন্তু সালমান আমার কাছে এসেছিলো সাধারণ একজন ছাত্র হিসেবে যে তার বন্ধুদের জন্যে নিরাপদ আবাস খুঁজছিলো। যেহেতু আন্দোলনটা তখন একপ্রকারের গণঅভ্যুথানে রুপ নিয়েছিলো, সে কারণেই আমি সালমান, কাদের ও অন্যান্যদের সহায়তা করি। সালমান তার রাজনৈতিক পরিচয় লুকিয়ে অপরাধ করেছে নাকি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে তা একমাত্র সাধারণ জনগনই বিচার করতে পারেন।
সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী আবির হাকিম ফেসবুকে লেখেন, কোভিডের পরে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের এক বড় ভাই একদিন সাদিকরে (Shadik Kayem) পরিচয় করাইয়া দিছিলো। বলছিলো, সাদিক আমাদের এলাকার ছোটো ভাই। ছাত্রলীগের ফ্রেশ ইমেজের ছেলে। সামনে ওরে হলের নেতা বানাইতে হবে। আমি যেন দেখে রাখি। সবকিছুই মানা যায় ভাই। কিন্তু ওরা যে শিবির হয়ে ফিরে আসতে পারে তা ভাবতে পারি নাই।
ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে দাবি করা সাদিক কায়েমের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায় বলে জানা গেছে। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।