লে. জেনারেল মুজিব বরখাস্ত, সাইফ অকালীন অবসরে
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান
সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জনের মাঝে এবার জানা গেল সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রভাবশালী ও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ডি জি এফ আই, এনএসআই, র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবিতে দায়িত্ব পালন করা এবং স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সে (এস এস এফ) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারের খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্ত বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।
মুজিব র্যাবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বহু সংখ্যক বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। সে সময় তার দুই সহযোগী ছিলেন বর্তমানে আটককৃত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও সাবেক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহায়েল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনারেল মুজিব পালিয়ে গেছেন ছড়িয়ে পড়লে বাংলা আউটলুকপর পক্ষ থেকে আইএসপিআরপ সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান ফেসবুকে অভিযোগ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান সেনা হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন।
পালিয়ে যাবার বিষয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন একজন বাংলা আউটলুককে জানান, চার ও পাঁচ আগস্ট তারিখে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সঙ্গে বেশ কয়েকজন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সামরিক শাসন জারির বিষয়ে তর্কে জড়ান। এরপরেই সরকার গঠনের সময় জেনারেল মুজিবকে অ্যার্টডক (আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড) জেনারেল অফিসের কমান্ডিং হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়।
তবে তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ১০ দিন আগে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে জানানো হয় । এর আগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত তদন্ত শুরু হয়েছে এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গেল মার্চ মাসে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভারতের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অনুষ্ঠান শুরু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মুজিবুর রহমান বিতর্কের সৃষ্টি করেন।
একই সময় সেনাবাহিনীর আরেকজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলমকে আলিন অবসরে পাঠানো হয়েছে। অবসরে পাঠানোর আগে পররাষ্ট্র দপ্তরের ন্যস্ত করা হয়েছিল।
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. সাইফুল আলম ও লুবনা আফরোজের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সন্তান ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ মাসে শুরুর দিকে বাংলাদেশ
ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের
হিসাব স্থগিতের এ নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে।
মো. সাইফুল আলম সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা। তিনি সর্বশেষ সেনাসদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক ছিলেন। গত ১৩ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, তাঁর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
সাইফুল আলম ১৯৮৬ সালের ২৭ জুন পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেন। মিলিটারি একাডেমি প্রশিক্ষণে তিনি তাঁর কোর্সে শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ড ক্যাডেট হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ এবং শ্রেষ্ঠ একাডেমি পারফরম্যান্সের জন্য ‘বিএমএ গোল্ড মেডেল’ অর্জন করেন। তিনি ২০২১ সালের ২৯ জুলাই সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সাইফুল আলম তাঁর দীর্ঘ ৩৯ বছরের পেশাগত জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।