আয়নাঘর ভেঙে গুম স্বজনদের ফেরত দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম
‘বাংলাদেশ গুম পরিবার’ আয়নাঘর উন্মোচন করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিখোঁজ ও গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম পরিবারের স্বজনরা এ হুঁশিয়ারি দেন। না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক ও লেক্সাস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে ১০ অক্টোবর র্যাব-১ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এক মাস ১০ দিন আমার ওপর নির্যাতন চলে। আমি যতদিন সেখানে ছিলাম, শুধু কান্নার আওয়াজ পেয়েছি। সেখানে ছোট ছোট ঘর। বাইরের কোনও আওয়াজ আসতো না। অনেক শর্ত দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে আমাকে ছাড়া হয়েছিল।
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন লিখিত বক্তব্য বলেন, গত ২৭ আগস্ট বর্তমান সরকার পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছেন। সেই গেজেট ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু ১৫ দিন পরও তারা কোথায় বসবে, কীভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে কোনো রোডম্যাপ আমরা জানতে পারিনি। একাধিকবার যোগাযোগের পরও তাদের থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তদন্ত কার্যক্রম কবে কখন চালু করা হবে আমরা জানতে চাই।
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, আয়নাঘর কোথায় কোথায় বানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কতটি আয়নাঘর আছে, তা আমরা জানতে পারিনি। বাংলাদেশে যদি আয়নাঘর থাকে তাহলে বিচার বিভাগ, আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব আয়নাঘর উন্মোচন না করা হলে সন্দেহভাজন সব আয়নাঘর ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে। সব আয়নাঘর ভেঙে দেওয়া হবে।
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যতগুলো গুম, খুন, অপহরণ হয়েছে তার শতকরা ৭০-৮০ শতাংশ র্যাব করেছে। ক্রসফায়ারের নামে নাটক সাজিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ মারা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত র্যাবে দায়িত্বে থাকা ডিজি, এডিশনাল ডিজি, ডিবির প্রধান ও ডিজিএফআই প্রধান, সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক স্বজনহারা শারমিন আক্তার চাঁদনী বলেন, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজশাহীর থেকে আমার ভাইকে র্যাব-৫ এর সদস্যরা নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আমরা থানায় থানায় ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাইনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন চাঁদনী। সেগুলো হলো– অবিলম্বে গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের টর্চার সেল থেকে নিঃশর্ত মুক্ত দিতে হবে; গুম-নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সবগুলো সেল দেখতে দিতে হবে; যাদের খুন করা হয়েছে তাদের পরিবারকে প্রমাণ স্বরূপ সনদ দিতে হবে; প্রতিটি নিখোঁজ পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; স্বাধীন বাংলাদেশের কোনও প্রকার আয়নাঘর থাকতে পারবে না এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।