তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে জাল রায় তৈরির অভিযোগে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আজ রবিবার এই মামলা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল বারী ভূইয়া।
মামলার এজহারে বলা হয়, এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর শুনানিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের খ্যাতিমান ৮ জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করা হয়। এরা হলেন সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির, অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনুদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হক। একমাত্র ব্যারিস্টার আজমালুল হক ছাড়া সবাই তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মতামত দেন।
এজহারে আরও বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হক, বিচারপতি এস.কে সিনহা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে রায় দেন। আর বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি ঈমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন। এ বিষয়টি সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আগেই বুঝতে পেরে সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে ষড়যন্ত্র করে তত্ত্বাবধায়ক চার্জ সরকার বাতিলের পক্ষে কাস্টিং ভোট প্রদান করেন। ফলে চার-তিনে মেজরিটি হয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তত্ত্ববধায়ক সরকার বাতিলের রায় হয়।
এজহারে আরও বলা হয়, প্রকাশ্য আদালতে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। এই সংক্ষিপ্ত রায়ের ওপর ভিত্তি করে সরকার তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে সংবিধান থেকে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। ২০১১ সালের ১০ মে চেম্বারে বসিয়া বেলা ২টায় আমি এই সংবাদ পাই। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় সর্বসম্মত ছিল না। রায় প্রদানের পরপরই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে চলে যান। অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পরে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস ও জাতির মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের কর্তাব্যক্তিদের পরামর্শ ও ইন্ধনে এক রায় লিখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে জমা দেন।
এজহারে আরও বলা হয়, রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তঞ্চকতা, জাল জালিয়াতি ও রাষ্ট্রদ্রোহ/ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংসের অভিপ্রায়ে পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হইতে পারে মর্মে (প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে) কথাটি বাদ দেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পরে প্রকাশ্য আদালতে দেওয়া রায়টি পরিবর্তন করে বিশ্বাস ভঙ্গ, তঞ্চকতা, জাল- জালিয়াতিপূর্ণ, রাষ্ট্রদ্রোহ/রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংসের ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার পরিদর্শক নূরে আযম বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে অ্যাড. আব্দুল বারী ভূইয়া বাদী হয়ে দুপুরে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরির অভিযোগ করা হয়েছে।