দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে ১০ জেলায় অন্তত দুজনের মৃত্যু এবং প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে যাচ্ছেন। অন্যান্য উপদেষ্টারাও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ বন্যায় ১০টি জেলায় ৩৬ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হয়েছে। 'আমরা এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
জেলাগুলোর মধ্যে ফেনীর ছয়টি উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানিতে বিদ্যুৎ লাইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের অভাব এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের কভারেজ ব্যাহত হওয়ায় বাসিন্দারা আটকা পড়েছেন এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত ১০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ ৫০ উপজেলার ৩৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজান এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পেতে পারে।
তিনি বলেন, মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীর তীরবর্তী মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে আলী রেজা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজান এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।
তিনি বলেন, মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা নদীর তীরবর্তী ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে, তবে পরে উন্নতি হতে পারে।
আট জেলায় বন্যার পানিতে আটকা পড়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৮০ পরিবার। এক হাজার ৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে জনগণের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ৪৪৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
আটকে পড়াদের উদ্ধারে সেনা, নৌবাহিনীর ও সদস্যরা কাজ করছে। এছাড়া দুর্গতদের উদ্ধারে বিজিবির নৌযান নিয়ে আসা হচ্ছে।
তিনি জানান, ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকায় ১৬০ জন সেনা সদস্য, ৪০টি উদ্ধারকারী জাহাজ, ৭১ জন নৌবাহিনীর সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগের জন্য ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বর দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন জানান, বন্যাকবলিত আট জেলার জন্য ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। এছাড়া ১১ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে ফেনী, কুমিল্লাসহ অন্যান্য এলাকার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জনগণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ারগুলো মেরামতের জন্য তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সূত্র : ইউএনবি