অপর্ণা ও মিথিলার লাল পাসপোর্ট দ্রুত সাধারণ পাসপোর্টে রূপান্তরের অনুমোদন দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর যখন সবাই নতুন সরকার গঠনে ব্যস্ত তখন পররাষ্ট্র সচিব তাড়াহুড়ো করে বিদেশে থাকা বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্টকে সাধারণ পাসপোর্টে রূপান্তরের অনুমোদন দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডি.-এম.-সালাহ-উদ্দিন-মাহমুদ দুই কাউন্সেলর অপর্ণা রানী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা এবং তাদের পরিবারের চার সদস্যের কূটনৈতিক পাসপোর্টকে সাধারণ পাসপোর্টে রূপান্তরের অনুমোদন দেন।
এ বিষয়ে জানতে মাসুদ বিন মোমেন এবং ডি.-এম.-সালাহ-উদ্দিন-মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে বাংলা আউটলুকে তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল ফাইলটি অনুমোদিত না হওয়ায় পররাষ্ট্র সচিব হার্ড কপি ব্যবহার করে এই রূপান্তরের অনুমোদন করেছেন। একই ধরনের আবেদন জমা দিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসির কাউন্সেলর আরিফা রহমান রুমা।
কর্মকর্তাদের মতে, কনস্যুলার বিভাগ আসল পাসপোর্ট ছাড়া একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে না। এটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির লঙ্ঘন। আর বিদেশি কর্মরতের সময় পাসপোর্ট সক্রিয় থাকাকালীন কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীর সশরীরে উপস্থিতি প্রয়োজন। অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হওয়ার পরে জমা না দিলে কনস্যুলার বিভাগ পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে, অপর্ণা রানী পাল ১৩ বছর ধরে অটোয়াতে দায়িত্বে রয়েছেন আর মিথিলা ফারজানাকে ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গত ১৪ আগস্ট মন্ত্রণালয় অপর্ণা, আরিফা এবং মিথিলাকে পৃথক চিঠি জারি করে নিয়োগ বাতিল করে।
মিথিলা ফারজানা একাত্তর টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের পরিচালক ও কাউন্সেলর হিসেবে মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলাকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, মিথিলা ও অপর্ণা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কাজ করছিলেন। তবে আরিফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
সম্প্রতি আরিফা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ১৪ আগস্ট আমাকে ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাস থেকে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে , ৩১ আগস্টের মধ্যে এখানকার দায়িত্ব ছাড়তে হবে। কোন কোন পত্রিকা দেখলাম মনগড়া তথ্য ছেপেছে।
তিনি পোস্টে আরও লেখেন, যেহেতু আমার নিয়োগটা চুক্তিভিত্তিক ছিল না, কাজেই চুক্তি বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। আমার মূল কর্মস্থল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় আমাকে প্রেষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে অসংখ্য ম্যাসেজ আর ফোন পাচ্ছি তাঁরা নিশ্চয়ই বিষয়টি পরিষ্কার হলেন।
তিনি আরও লেখেন, আমি হোম লিভে গত ১৯ জুলাই ঢাকা পৌঁছাই এবং ১৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে আমার কর্মস্থলে ফিরে আসি। লিভ আর হয়নি , বেঁচে আছি এটাই বরং ঘটনা। পুরো সময়টা নিয়ে নিশ্চয়ই এক সময় লিখবো। ডায়েরি লেখার বদভ্যাস থাকায় ভোলার সুযোগ নেই।
আরিফা ১৩ আগস্ট কূটনৈতিক নাকি সাধারণ পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তা জানা যায়নি।