Logo
Logo
×

সংবাদ

দেশ ছাড়তে মরিয়া পলকের দুর্নীতির সহযোগী আলতাফ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম

দেশ ছাড়তে মরিয়া পলকের দুর্নীতির সহযোগী আলতাফ

আলতাফ হোসেন

চাকরি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদে বসে করেছেন দুর্নীতি। দেশ ও বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। অবসরের পর আমেরিকায় পরিবার নিয়ে স্থায়ী হয়েছেন। সম্প্রতি অবসরের অর্থ তুলতে তিনি দেশে আসেন। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন তিনি বিপাকে পড়েছেন। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের দুর্নীতির ঘনিষ্ঠ এ সহযোগী এখন যেকোনো মূল্যে দেশ ছাড়তে চাইছেন। 

সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার নাম আলতাফ হোসেন। তিনি সর্বশেষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। ২০১৯ থেকে দুই বছর ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স (ইএমআরসিআর) প্রকল্পের পরিচালক। বিশ্ব ব্যাংকের ১৬৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানের একটি প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া কেন্দ্রে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, হাটবাজার, সড়ক, নালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প তিনি বড় অঙ্কের অর্থ লোপাট করেন। 

তবে তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলেও বিভাগীয় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত বছরের ২৯ জুন অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা অনিয়মের জন্য লঘুদণ্ড দিতে সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে রাষ্ট্রপতি তাকে মামলা থেকেই রেহাই দেন। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এ প্রকল্পের পরিচালক থাকাকালে আলতাফ হোসেন সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) লঙ্ঘন করে মালপত্র কেনেন। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে মালপত্র ক্রয়ের শর্ত ছিল। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) পদ্ধতিতে, অর্থাৎ ঠিকাদারের দেওয়া মূল্য তালিকা অনুযায়ী ২৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকার মালপত্র কেনেন।

প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য গাড়ি ভাড়ায়ও অনিয়ম করেন তিনি। এখানেও আরএফকিউ পদ্ধতিতে গাড়ি ব্যবহার করা হয়। ভাড়া দেওয়া হয় ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। গত বছরের ২৯ নভেম্বর অভিযোগ বিবরণী জারি করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। 

গত বছরের ২৫ জানুয়ারি শুনানির পর অভিযোগ তদন্ত শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২৯ মে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে অসদাচরণের সন্দেহাতীত প্রমাণ পাওয়া যায়। চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছেন এই বিবেচনায় সে সময় আলতাফ হোসেনকে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার করার সুপারিশ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী। 

জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, যুগ্ম সচিব এবং ততোর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সচিব সাজা দিতে পারেন না। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি সাজা দিতে পারেন। মন্ত্রণালয় তিরস্কারের মতো লঘুদণ্ডের সুপারিশ করলেও, এ সাজাও পেতে হয়নি আলতাফ হোসেনকে। 

গত বছরের ২৬ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি বিভাগীয় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এর তিন দিন পর তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। 

একটি সূত্র জানিয়েছে, আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৪১ লাখ টাকার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশিত হলেও বাস্তবে তিনি শত কোটি টাকার মালিক। হাসিনা সরকারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দপ্তরগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধান ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে তিনি দেশে ও আমেরিকাতে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। পরিবার নিয়ে তিনি আমেরিকাতে বসবাস করলেও মাঝে-মধ্যেই তিনি দেশে আসেন। মাস দুয়েক আগে তিনি দেশে আসেন। সম্প্রতি তিনি তার অবসরের যাবতীয় অর্থ বুঝে নিয়েছেন। আগামী শুক্রবার (২৩ আগস্ট)তিনি পুনরায় আমেরিকা ফিরে যাবেন।   

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলতাফ হোসেন বাংলা আউটলুককে বলেন, পলক সাহেব দুর্নীতি করেছে না কি করেছে সে বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি যেখানে কাজ করেছি সেখানে আমি কোনো দুর্নীতি করি নাই। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে একটা বিভাগীয় মামলা ছিল সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন