ডিসি-ইউএনওদের গাড়ির খবর নেই, পুরো বিল পরিশোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
দেশের আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি অত্যাধুনিক গাড়ি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। গাড়ি ক্রয়ে অর্থবিভাগের সায় না থাকলেও অনেকটা চাপে পড়ে গাড়িগুলো ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে সূত্র জানিয়েছে, জাপান থেকে আমদানিকৃত গাড়িগুলো দেশে আসার আগেই গত জুন মাসে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে গাড়ি ক্রয়ে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ মে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় ডিসি ওইউএনওদের জন্য ২৬১টি নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়। গাড়িগুলোর ধরন হচ্ছে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), যেগুলো ২ হাজার ৪৭৭ সিসির মিতসুবিশি পাজেরো জিপ নামে পরিচিত। এগুলোর মডেল হচ্ছে মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স। ডিসিদের জন্য এমন গাড়ি কেনা হবে ৬১টি ও ইউএনওদের জন্য ২০০টি।
ডিসি ও ইউএনওদের জন্য সাদা মুক্তা (হোয়াইট পার্ল) বা মেরুন রঙের গাড়ি কেনার কথা বলে গত ১২ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একটি সারসংক্ষেপ পাঠান সচিব।
সূত্রগুলো জানায়, ১৫ মে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ক প্রস্তাব উপস্থাপিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। অর্থনৈতিক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত নভেম্বরে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্থগিত রাখে।
সূত্র জানিয়েছে, এসব গাড়ির প্রতিটির মূল্য পড়বে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সময় বাঁচাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে গাড়িগুলো ক্রয় করবে শিল্প মন্ত্রণালয় ভুক্ত প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে। আর প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ জাপানের মিতশুবিশি কোম্পানি থেকে গাড়িগুলো আমদানি করবে।
জানা গেছে, গত জুনের শেষ দিকে ১৫০টি গাড়ি দেশে এসে পৌঁছেছে, বাকিগুলো পথে রয়েছে এমন দাবি করে প্রকল্পের পুরো বিল পরিশোধের দাবি জানানো হয় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের দপ্তরে। তবে ১৫০টি গাড়ির স্থলে পুরো বিল পরিশোধের দাবি জানানোয় সে সময় বিল পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এসময় বিল পরিশোধ করতে জনপ্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী একাধিকবার হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ফোন করেন। তবে তাতেও অর্থ ছাড় হয়নি। এর দুই দিন পর অর্থবছর শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ পুনরায় নতুন করে কাগজপত্র নিয়ে জমা দেয় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের দপ্তরে। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যানবাহন অধিদপ্তর সবগুলো গাড়ি বুঝে পেয়েছেন মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্রও জমা দেন। পরে বিলের ৩৮২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, মে মাসের ২১ তারিখ গাড়ি ক্রয়ের অনুমোদন হওয়ায় জুন মাসের মধ্যে কোনোভাবেই গাড়িগুলো বাংলাদেশে আনা সম্ভব নয়। বিষয়টি সহজে বোধগম্য হলেও সরকারের কয়েকটি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিল উত্তোলন করে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ। এখানে বড় অঙ্কের ভাগ বাটোয়ারার বিষয় রয়েছে বলেও দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান।
এদিকে গাড়ি ক্রয়ে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর পরিবহন কমিশনার মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবির বাংলা আউটলুককে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি ক্রয়ের বিষয়টি থেমে আছে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আমরা এটি পুনরায় শুরু করবো।
প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি টাকাতো বাসায় নেওয়া সুযোগ নাই। যেখান থেকে গাড়ি কেনা হচ্ছে তাদের টাকা দেওয়া হয়েছে। সরকারি টাকাতো আর বাসায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে অর্থ ছাড়ের একটি বিষয় ছিল। যে কারণে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। গাড়ি কিছু আমরা পেয়েছি। আর কিছু পথে আছে বলেও জানান তিনি।
তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ২৬১টি গাড়ির বিল উঠিয়ে নিলেও দেশে ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ি আসতে পারে। সূত্রটির দাবি, সব প্রক্রিয়া শেষ করে এতোগুলো গাড়ি এতো অল্প সময়ের মধ্যে জাপান থেকে দেশে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য অন্তত ছয় মাস সময় প্রয়োজন।