আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্য বিভিন্ন খাতের মতো আর্থিক খাতেও নানা দুর্নীতির খবর আসছে। এর মধ্যে অন্যতম, যা আতঙ্কের জন্ম দিয়েছিল ব্যাংকিং খাতে, শুধু এস আলমই অন্তত ৬৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। অন্যান্য শাখায় আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এই দৈত্যের।
ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম তার ১২টি কোম্পানির নামে এই ঋণ নিয়েছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক একজনকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ দিতে পারে।
তাহলে কিভাবে ব্যাংকটি তাকে এত টাকা দিল?
২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে প্রথমে পরিচালকদের তালিকায় নাম লেখান এস আলম। সে সময় সরকার নিয়ম করেছিল, মাত্র ২ শতাংশ শেয়ার থাকলেই তিনি পরিচালক হিসেবে পর্ষদের যোগ দিতে পারবেন। ব্যাংক পরিচালনায় অংশ নিতে পারবেন। এটাই সুযোগ। এরপর জোরজবরদস্তি করে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেন এস আলম। এমন ঘটনা অন্য আরও কিছু ব্যাংকেও ঘটেছে।
এ নিয়ে দেশের ব্যাংক খাত সমালোচনায় সরব ছিল গত দেড় যুগ ধরে।
সরকার পতনের পর ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হোসেন, জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ এফসিএস, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আকিজ উদ্দিন, কাজী রেজাউল করিম, কামাল হোসেন, মোহাম্মদ সাব্বির গা ঢাকা দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবর। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কায়সার আলী।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রধান এস আলম বা সাইফুল আলম। কথিত আছে, তিনি বিদেশের বিপুল টাকা পাচার করেছেন।
ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ রকম কর্মকাণ্ডই তো বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে দুর্বল করেছে। এমন ঘটনা যেন আর না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
২০১৭ সালে এস আলম ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই কয় বছরে এত ঋণ নিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে খাতুনগঞ্জ শাখার ৫ কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক হিসেবে এই ঋণ অনুমোদন করেন। প্রত্যেক ব্যবস্থাপকই ঋণ অনুমোদনের পর দ্রুত পদো পদোন্নতি পেয়ে হেড অফিসে বদলি পেয়েছেন। সেই ব্যবস্থাপকরা হলেন মোহাম্মদ কায়সার আলী, সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পুরো ব্যাংক খাত ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিচারের আওতায় আনা হবে। একটু সময় লাগবে।’