Logo
Logo
×

সংবাদ

ওয়েবিনার

হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা করা জরুরি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম

হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা করা জরুরি

গণ-অভ্যুত্থানের নেপথ্যে থাকা আকাঙ্খা বাস্তবায়নে সুদূরপ্রসারী সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আজ সোমবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: এখন কী করতে হবে’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে বিশ্লেষকরা এই এ কথা বলেন। 

সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ওয়েবিনারে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ, এখন কী করতে হবে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি প্রবন্ধে রাষ্ট্র সংস্কার, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, পরিসংখ্যান জালিয়াতি থামানো, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিস্থিতি, ডিজিটাল অর্থনীতির নিরাপত্তা, মেধাভিত্তিক নিয়োগ বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।

ওয়েবিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে একটি অসহনীয় অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তার ফল এই গণ-অভ্যুত্থান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে ক্রান্তিকালীন সরকার হিসেবে-এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য। তিনি আন্দোলন থেকে দুটি বার্তা পেয়েছেন। প্রথমত, যারা অন্যায় করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, ওই অবস্থার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য সুদূরপ্রসারী সংস্কার করতে হবে। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। এগুলো সময়সাপেক্ষ ও জরুরি। তিনি বলেন, এই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন। কিছু সংস্কার পরবর্তী সময়ে করতে হবে, যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবেন, তারা সেটি করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে যেতে হবে, যাতে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা যায়।

তিনি আরও বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্রদের নেতৃত্বে যে গণবিস্ফোরণ হয়েছে, যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা নস্যাৎ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অনেক চেষ্টা হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার চেতনা থেকে দেশ যোজন যোজন দূরে। ১৯৯১ সালে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার যেন ব্যর্থতা না আসে, সেজন্য ছাত্রসমাজ ও নাগরিক সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে।

ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জন-আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার গঠিত হয়েছে। দুটি আকাঙ্খা-একটি হলো এই সরকার দ্রুত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। অন্যটি হলো বড় রকমের পরিবর্তন আনতে হবে। সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। যারা সরকারে আছেন, তারা বলুক এই দুটি স্বপ্নের মধ্যে তারা কী করতে চান। 

আলী রীয়াজ আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে এই সরকারের মামলা করা জরুরি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়া যেতে পারে। যারা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। 

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই সংবিধান রেখে জবাবদিহিমূলক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়। এই সংবিধানেই স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করা আছে। এই সংবিধান রেখে চিরস্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্রের বিলোপ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে জন-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে হবে। ১৫ বছরে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। কাঠামো ভেঙে পড়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পুনর্গঠন করতে তাড়াহুড়া কেন, দেশ বদলাতে চান না?

এ সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহুমুখী ঘটনা ঘটেছে। দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহায়তা নেয়া দরকার। তিনি বলেন, বাক্স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব কালো আইন বাতিল করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করে সংস্কার পরিকল্পনা করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, সংসদ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতির ঘটনাগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের মধ্যে জবাবদিহি সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষা ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের দাবি রাজনৈতিক দিক থেকে যৌক্তিক তবে ডকট্রিন অব নেসেসিটি থেকে এখনই তা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে ভাবতে হবে।

ওয়েবিনারে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান বলেন, এখন যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোর দাবি করা হচ্ছে, সেগুলোর ভিত্তি ২০০৭-০৮ সালে করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনেক কিছু ধুয়েমুছে ফেলা হয়। এখন এমন কিছু করতে হবে, যাতে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক নতুন করে দাঁড়াতে পারে। গণতন্ত্র নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।

ওয়েবিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ আসতে পারে রাজনৈতিক দল থেকে। রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য যেসব ব্যবস্থা আছে, সেগুলো তারা সহজে পরিবর্তন করতে চান না। ১৯৯১ ও ২০০৭-০৮ সালেও এ ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল; কিন্তু পরিবর্তন আসেনি। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিচারহীনতা। অপরাধীদের বিচার করা যায়নি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন