Logo
Logo
×

সংবাদ

শেখ হাসিনার পতনের পর জয়ের বারবার কথা বদল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম

শেখ হাসিনার পতনের পর জয়ের বারবার কথা বদল

সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: সংগৃহীত

প্রবল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। আন্দোলনকারীদের হাত থেকে বাঁচতে যাওয়ার সময় বাড়তি কাপড়চোপড় ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র পর্যন্ত সঙ্গে নিতে পারেননি। ছোটবোন শেখ রেহানা ও নিজের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিয়ে এক সামরিক হেলিকপ্টারে কোনোরকম পালিয়ে ভারতে গিয়ে বাঁচেন শেখ হাসিনা। 

এদিকে, তার যাওয়ার পর থেকেই তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন। আবার সামাজিক মাধ্যম দিয়ে ভিডিও বার্তাও দিচ্ছেন। তবে একেক সংবাদমাধ্যমকে একেক কথা বলছেন। মানে আগের বারের কথার সঙ্গে পরের বারের বলা কথায় কোনো মিল থাকছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দিনই বললেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। পরের দিন বললেন, শেখ পরিবারের কেউ আর রাজনীতিতে আসবে না। ঠিক একদিন পরই আবার বললেন, আমরা আছি।

এর পরদিন বললেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। তবে রাজনীতিতে ফিরবেন কিনা বলেননি। সর্বশেষ আজ বললেন তিনি নিজেই রাজনীতিতে আসতে প্রস্তুত আছেন। 

হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবার সজীব ওয়াজেদ জয় কথা বলেন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সঙ্গে। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি বিবিসিকে জানান, শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমি – আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।’

এরপর জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে জয় বলেন, ‘তিনবারের মতো আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ক্যু হলো৷ তিনবারের মতো সবকিছু হারিয়ে বিদেশে থাকতে হলো৷ আমি আর আমার মা বাদে আমরা সবাই বিদেশে অনেকদিন ধরে আছি৷ আমরা এখানে সেটেলড৷ আমাদের এখানে জীবনের কোনো অসুবিধা নেই৷ আমরা এখানে থাকতে অভ্যস্ত৷’

শুধু তাই নয়, শেখ রেহানাসহ শেখ পরিবারের কারও রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নাই বলেও সেদিন মন্তব্য করেন। 

এর একদিন পর ৭ আগস্ট বুধবার অবশ্য এক ভিডিও বার্তায় ভোল পাল্টাতে শুরু করেন জয়। এদিন তিনি আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন। নেতা-কর্মীদের সাহস নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন জয় বলেন, ‘আমরা আছি।’

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এখন দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সারা দেশে ভাঙচুর, লুটপাট হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ কিন্তু মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ এই দেশকে স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’

এদিন অবশ্য, শেখ হাসিনার পরিবার রাজনীতিতে আসবে না—আগে দেওয়া এই বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সবচেয়ে বড় দল। আওয়ামী লীগ কোথাও যাবে না। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা সবাই সাহস নিয়ে দাঁড়ান, আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার কোথাও যায়নি। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। দেশকে, আমাদের নেতা-কর্মীদের এবং আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার জন্য যা প্রয়োজন আমরা করতে প্রস্তুত।’

তারপর ৮ আগস্ট বৃস্পতিবার আরেক ধাপ এগিয়ে জয় বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেই দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা। 

ভারতীয় বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) টেলিফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তবে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে ফিরবেন কি না, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

জয় আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে ছেড়ে যাবে না এবং এই দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের কাউকেও ছেড়ে যাবে না।’

এদিনও আগের করা মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ কথা সত্যি যে আমি বলেছিলাম তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফিরবেন না। কিন্তু সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাগাতার হামলার পর গত দুই দিনে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরাপদে রাখতে যা যা করা দরকার, আমরা তাই করব। আমরা তাদের একা ছেড়ে দেবো না।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পুরোনো রাজনৈতিক দল। তাই আমরা আমাদের জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি না। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে তিনি (শেখ হাসিনা) অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।’

সর্বশেষ আজ শুক্রবার ৯ আগস্ট তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, রাজনীতিতে যোগ দিতে তিনি প্রস্তুত। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে ফোনে তিনি বলেন, 'দল ও দলের কর্মীদের বাঁচাতে যা প্রয়োজন, তা আমি করব।'

জয় বলেন, '(এই লক্ষ্য অর্জনে) প্রয়োজনে যদি আমাকে রাজনীতিতেও আসতে হয়, তাতেও পিছপা হব না। আমার মা তার বর্তমান মেয়াদ শেষে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। আমার নিজের কখনো কোনো রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল না। আমি যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে, সেখানে নেতৃত্বও সংকট তৈরি হয়েছে। দলের স্বার্থে আমাকে সক্রিয় হতে হচ্ছে এবং আমি এখন সম্মুখভাগেই রয়েছি।'

জয় আরও বলেন, 'আমি নিশ্চিত পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে এবং আমরা তাতে জিততেও পারি। বাংলাদেশে আমাদের দলের সমর্থকরা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি।'

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন