মিরপুরের সাবেক এমপি কামালের ২ হাজার বিঘার অবৈধ সাম্রাজ্য তছনছ হওয়ার পথে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৪ পিএম
ঢাকার অদূরে সাভারের আড়ালিয়া বাজার এলাকায় মিরপুরের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রকল্প
ঢাকার অদূরে সাভারের আড়ালিয়া বাজার এলাকায় অবৈধভাবে মানুষের জমি দখল করে মিরপুরের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের সাম্রাজ্য গড়েছিলেন। তবে সেই সাম্রাজ্য এখন তছনছ হওয়ার পথে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর জমির প্রকৃত মালিকেরা এসে তাদের জমির দখল শুরু করেছেন। এর আগে শেখ হাসিনার পালানোর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হলে স্থানীয়রা তার প্রকল্পের হরিণসহ অসংখ্য গবাদিপশু ও মাছ লুট করে নেয়।
জানা গেছে, আশির দশকে সাভারের বরাকৈর মৌজায় কয়েকশ বিঘার একটি প্রকল্প স্থাপন করেন ঢাকা-১৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকল্প এলাকার আশপাশের জমি একের পর এক দখল করতে থাকেন তিনি। বর্তমানে পুরো এলাকায় তার অধীনে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে বৃহদাকার একটি সোলার প্রকল্প করার কথা।
তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পাটির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সে প্রকল্পটি ভেস্তে যায়। বর্তমানে দখলকৃত জমিতে পুকুর ও চারিদিকে নালা করে লোহার গ্রিল ও কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন কামাল আহমেদ মজুমদার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কামাল মজুমদারের বিশাল প্রকল্কটির মধ্যে একাধিক টর্চার সেল রয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় জমি দিতে চাইতো না, নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদের সেখানে আটকে নির্যাতন করা হতো। তারপর জমি রেজিস্ট্রি করে দিলেই মিলতো মুক্তি। বিষয়টি ওই এলাকার ওপেন সিক্রেট হলেও এতোদিন ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।
গত সোমবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ওই প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী একটি প্রকল্পের কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, কামাল মজুমদার দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষকে অত্যাচার করে জমি দখল করেন। সোমবার দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার পর এলাকার শতশত মানুষ তার প্রকল্প থেকে কয়েকশ হরিণ, গরু, ছাগল ও বিপুল পরিমাণ মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। সে সময় কামাল মজুমদারের কোনো লোক সেখানে ছিল না।
এর আগে বিভিন্ন সময় জমির প্রকৃত মালিকরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে মাহবুবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, বছর পাঁচেক আগে কামাল মজুমদার জোর করে তার জমি দখল করেন। সে সময় তিনি কামাল মজুমদারকে জানান, তার জমিটি পদ্মা ব্যাংক মতিঝিল শাখায় মরগেজকৃত সম্পত্তি। তিনি জমিটি দখল না করার অনুরোধ জানান। তবে তাতে নিবৃত হননি মিরপুরের সাবেক এই সাংসদ। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে কামাল মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি আরও জানান, তাতেও কামাল মজুমদার জমি না ছাড়লে সংশ্লিষ্ট ধামরাই থানায় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মাহবুবুল ইসলাম। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার কামাল আহমেদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিস্পত্তির অনুরোধ জানান। এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার তদবির করা হলেও দখল ছাড়েননি প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা। এমনকি দুই দফা দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করার পরও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুদক।
মাহবুবুল ইসলাম জানান, স্ত্রী ও নিজ নামে মোট ৯২ শতাংশ জমির অনলাইন খাজনা ২০৩০ সাল পর্যন্ত পরিশোধ করা রয়েছে।
সূত্র জানায়, এছাড়াও কামাল আহমেদ মজুমদার যাদের জমি দখল করেছেন তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন একত্রিত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জমি উদ্ধারের জন্য একটি সমঝোতা পত্র সই করেন। নিজেদের জমি উদ্ধারে তারা বর্তমান সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এছাড়া কামাল আহমেদের অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো পক্ষ যাতে জমি দখলে না নিতে পারে সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমির প্রকৃত মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।