এমপি নিখিল আর ডিসি জসিমের নেতৃত্বে ছাত্রদের ওপরে গুলি চালায় পুলিশ ও সরকার দলের লোকেরা
স্বাধীন হাসান
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১১:৫১ পিএম
ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ ও যুবলীগ নেতা মইনুল হোসেন খান নিখিল কর্মীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। লালচে পাঞ্জাবি পড়া ছবিটি নিখিলের।
ঢাকার মিরপুরে গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাচলে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ ব্যাপক পরিমাণ গুলি, রাবার বুলেট আর সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। সংঘাত গুরুতর হয়ে উঠলে পুলিশের সাথে যোগ দেয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
পুলিশের গুলির পাশাপাশি তাদের উপস্থিতিতেই সরকার দলের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদেরকে প্রথমে ইট পাটকেল মেরে নিভৃত করার চেষ্টা করে। অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিলে মিরপুর মডেল থানার সামনে অপেক্ষমাণ মিরপুর অপরাধ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন।
আর বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে দেখা যায়, ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ ও যুবলীগ নেতা মইনুল হোসেন খান নিখিলকে। তার উপস্থিতিতে একে একে শর্ট গান ও রিভলভার নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী। অস্ত্র হাতে নিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের দিক থেকে প্রশিকার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদেরকে ধাওয়া করে সেসব অস্ত্রধারীরা। তাদের সাথে পুলিশকেও দেখা যায় অংশ নিতে।
মইনুল হোসেন খান নিখিলকে দেখা যায় তিনি মিরপুর এক নম্বর মুখ দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং তার দলবলকে ছাত্রদের দিকে যেতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এরপরেই অন্তত ৫ জন অস্ত্রধারী পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রদের ওপর অস্ত্র চালাতে দেখা যায়।
হেলমেট পরিহিত সরকার দলের নেতা-কর্মীদের গুলি চালানোর মধ্যে ছাত্ররা একটি বাসকে ঢাল বানিয়ে ঈদ পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে এ প্রতিবেদক গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সেদিন আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নিশ্চিত করেছেন ১৪ আসনের সবখানে ঘুরে ঘুরে আন্দোলন কমানোর চেষ্টা করেছিলেন তাদের সংসদ সদস্যরা।
এ বিষয়ে জুলাইয়ের ২১ তারিখে পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পুলিশের পাশাপাশি তিনি সরকার দলের নেতা-কর্মীদের অস্ত্র চালানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, তার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি তথ্য পেলে ব্যবস্থা নিবেন। এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কোনো অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে গেল সপ্তাহের সহিংসতার ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ২২৯টি। তার তাতে মোট গ্রেপ্তার ২ হাজার ৭৬৪ জন। অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী।
প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অন্তত নয় হাজার কর্মীকে সারাদেশে আটক করা হয়েছে।