আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যে বার্তা দিলেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৬ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম
বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নতুন বার্তা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি চলমান আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মরণ করেন এবং প্রতিবাদী ছাত্র-নাগরিকদের স্যালুট জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আলোচনার জন্য বলা হচ্ছিল। আমরা বলেছিলাম আমাদের ভাইদের শহীদ করা হয়েছে, আমাদেরকে হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, রাজপথে এখনো গুলি চলছে — এই অবস্থায় আমরা কোনো ধরনের সংলাপে যাবো না। সরকারকে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, শুক্রবার ১৯ জুলাই রাত ৮ থেকে ১০টা পর্যন্ত আমাকে নানা পক্ষ থেকে জোরাজোরি করা হয় সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য এবং কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য। আমি সংলাপের আহ্বানকে বরাবরের মত প্রত্যাখান করি। পরে কারফিউ এর ভিতরও শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহতের ঘোষণা দিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখি এবং বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে মেসেজটি পৌঁছাই। কিন্তু কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদটি রাতে প্রচার করা হয়নি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, পরের ঘটনা আপনারা সকলেই জানেন— আমাকে সেই রাতেই তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সমন্বয়ককে সেই রাতে গুম করা হয়। পরের ঘটনাক্রম থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে এবং আমাদের নেতৃত্ব ও নির্দেশনা ঠেকাতে এই গুমের পরিকল্পনা। ইন্টারনেট বন্ধ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ সরকারের কব্জায় থাকায় যেসব সমন্বয়ক বাহিরে ছিল তাদের নির্দেশনা প্রচার করা হয়নি অথবা বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। পুরো সময়টায় আমাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবাদী ছাত্র-নাগরিক শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। শত শত মানুষ শহীদ হয়েছে৷ আমরা তখন তাঁদের পাশে থাকতে পারি নাই। এজন্য আমাদের ক্ষমা করবেন। আমি বের হয়ে আহত অবস্থায় যথাসম্ভব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং অন্য সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে সকলের সাথে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত বক্তব্য ও কর্মপরিকল্পনা সকলের সামনে পেশ করবো। এখন আমাদের জরুরি চারটি দাবি হলো— ইন্টারনেট খুলে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে সকল ক্যাম্পাসের হল খুলে দেওয়া, কারফিউ প্রত্যাহার করা এবং সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমাদের দুটি দাবি ইতোমধ্যে আংশিক পূরণ হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে ও কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সারাদেশের অনেক সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন, করণীয় জানতে চাইছেন। সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে—
১. রংপুরের আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের স্মরণ করুন। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করুন। তাঁদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে ধারণ করুন। শহীদদের কবর জিয়ারত করুন। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করুন।
২. হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে যান, তাঁদেরকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন। আমরা ঢাকা থেকে দ্রুতই একটা ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিবো।
৩. এখনো অনেক লাশের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় নি। সক্ষমতা থাকলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে সহায়তা করুন৷ মর্যাদার সাথে তাঁদের দাফন করুন। জানাজায় অংশগ্রহণ করুন।
৪. প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ও এলাকায় কারা শহীদ হয়েছে ও আহত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করুন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন৷ আমরা পরবর্তীতে সমন্বয় করবো।
৫. যেসকল সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে রাখুন।
৬. যারা যে স্থানে আন্দোলন করেছেন নতুন করে সংগঠিত হন। সকলে নিরাপদে থাকুন, চিকিৎসা নিন এবং গ্রেফতার এড়ান। ফেসবুকে ক্ষোভ না ঝেড়ে মাঠের প্রস্তুতি নিন। ইন্টারনেট নির্ভর না হয়ে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা ভাবুন। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সকলের সাথে যোগাযোগ করবো।
৭. শিক্ষার্থীরা যার যার ক্যাম্পাস ও হল খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিন। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৮. যেসকল শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা প্রবাসে আছেন আন্তর্জাতিকভাবে এই ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়ন প্রচার করুন। বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সকলকে ধৈর্য ধরার ও মনোবল শক্ত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাকে যখন ধরে নিয়ে গিয়েছিল একটা জিনিসই ভাবছিলাম রাজপথে এখনো মানুষ লড়ছে। যত নির্যাতনই করুক আমাকে সরকার মেরে ফেলতে পারবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। বাংলাদেশে ছাত্রদের কখনই দমন করা যায় নাই এবারও যাবে না।