ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার চীন সফরের নতুন বয়ান
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের দিকে তাকিয়ে ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়া দিল্লিসহ ঢাকার রাজনীতিক ও বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনার এই সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই কারণে যে, চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটি বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা দেবে। যা বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট ও ঋণ পরিশোধে ঢাকা কাজে লাগাবে। তবে প্রতিশ্রুত সেই অর্থ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যান। কিন্তু সফরের মাঝপথেই সফরের সময় একদিন কমিয়ে সফরকে তিনদিনে আনা হয়। এই নিয়ে, কিংবা পুরো চীন সফর নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তার বেশিরভাগই ইতিবাচক বলা যায়। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইকোনোমিক টাইমসে প্রকাশিত সংবাদে শেখ হাসিনার এই সফরের নতুন একটি বয়ান দেখা যায়।
যেমন সফর সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে দুই ধরনের তথ্য জানা গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান একদিন আগে আসার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘সকালে আসলে একটা দিন চলে যায়, রাতে চলে আসলে দিনটা বেঁচে যায়।’
অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অসুস্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী একদিন আগে দেশে ফিরছেন। কিন্তু দি ইকোনোমিক টাইমস বলছে অন্য কথা।
দিন বাঁচানো বা মেয়ের অসুস্থতার কারণে নয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীনের আর্থিক সহায়তা না করা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপযুক্ত প্রটোকল না দেওয়ায় শেখ হাসিনা স্পষ্টতই ‘বিব্রত’ছিলেন। শনিবার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে দি ইকোনোমিক টাইমস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে চীন যান। কিন্তু সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগেই দেশে ফিরে আসেন। সফরের উদ্দেশ্য যে হাসিল হয়নি শেখ হাসিনার একদিন আগে দেশে ফেরা তারই ইঙ্গিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উপযুক্ত প্রটোকল দেয়নি যার কারণে তিনি ‘বিব্রত’ হয়ে থাকতে পারেন। চীন ঢাকাকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, হাসিনার সফরের আগে চীন প্রাথমিকভাবে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সফরের সময় সেই সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এদিকে, সামাজিক যোগামাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ১০ জুলাই এক পোস্টেও বলেছে, বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউয়ান (১৩৭ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছে চীন।
এছাড়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যতটা দীর্ঘ হবে বলে শেখ হাসিনা আশা করেছিলেন তেমনটা হয়নি। এমনকি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ে বেইজিং সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। বৈঠক হয়েছে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে।
আওয়ামী লীগের দলীয় এক্স অ্যাকাউন্টে শেখ হাসিনার এই সফরের বিস্তারিত সম্পর্কে পোস্ট করা হয়। এসব পোস্টের মধ্যে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও ছিল। কিন্তু চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন এমন কোনো ছবি সেই অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়নি।
চীনের মিডিয়া শেখ হাসিনাকে উপেক্ষা করেছে
দি ইকোনোমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনাকে যথেষ্ট মিডিয়া কভারেজ দেওয়া হয়নি। এমনটা চীনের রাষ্ট্রচালিত মিডিয়ায় একেবারেই বিরল। কারণ দেশটির রাষ্ট্রচালিত মিডিয়ায় সফররত বিদেশি নেতাদের ব্যাপক কভারেজ দেওয়ায় প্রসিদ্ধ। এর তাৎক্ষণিক প্রমাণও পাওয়া যায়। কারণ শেখ হাসিনার সফরের সময় (১০ জুলাই) বেইজিং সফর করছিলেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউয়ের প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালো। তিনিও ব্যাপক কাভারেজ পান।
দি ইকোনোমিক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার প্রতি চীনের এই কূটনৈতিক গতিশীলতাই পারিবারিক কারণ দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে সফর সংক্ষিপ্ত করায় প্রভাবিত করতে পারে।