Logo
Logo
×

সংবাদ

গতি বাড়াচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় পাশে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম

গতি বাড়াচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় পাশে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

কোটাবিরোধী আন্দোলনের একটি পুরোনো ছবি।

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। রবিবার (৬ জুলাই) থেকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা। দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তুমুল ঢেউ তুলেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। 

ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।বিশেষ করে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানোর পর দলটি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানানোর চিন্তা করছে। 

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই বিএনপি এটাকে যৌক্তিক দাবি হিসেবে মনে করছে। সে সময়ই দলের পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। সরকার বিষয়টি মেনে নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। কিন্তু আজো সেটি বাস্তবায়ন না করায় আবারও শিক্ষার্থীরা মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি শিক্ষার্থীদের এ দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায়। 

এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, কোটা কখনো মেধার বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং, চাকরিতে কোটার ব্যাপারে ছাত্র-তরুণদের দাবি অবশ্যই ন্যায্য এবং যৌক্তিক। জনগণের রায়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে অবশ্যই ছাত্র-তরুণদের যেকোনো যৌক্তিক এবং ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করবে। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধীদের বিষয়টিও রাষ্ট্র অবশ্যই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় স্বৈরাচারী হাসিনা কোটা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছিল। এখন আবার আদালতকে ব্যবহার করে সেই কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছে। এটি স্পষ্টই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা। হাসিনা একজন প্রতারক বলেই বারবার জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।

সূত্র বলছে, অতীতের মতো শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে আবারও সেই পুরণো কৌশল নিচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে তারা ছাত্রলীগকে দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভন্ডুল করতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় শিক্ষকদের ব্যবহার করতো। তবে এবার পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, অতীতে শিক্ষার্থীদের যে কোনো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে ক্লাসে শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতেন। শিক্ষার্থীদের তারা বোঝাতেন এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ইন্ধন দিচ্ছে। তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এসব বুঝিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তারা নিরুৎসাহিত করতেন। কিন্তু এবার তেমনটি এখনো হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে ঢাবির রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি পোস্টও করেন। সেখানে তিনি লেখেন, আগের আন্দোলনে শিক্ষকরা অনেক ভুল-ভাল বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন। এখন নিজেরাই আন্দোলনে আছেন। এবার বোঝেন, ন্যায্য অধিকার কি, অধিকার আদায় করে নিতে কত কষ্ট। 

এদিকে, এ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সরকারের পক্ষ থেকে সেই পুরোনো কেচ্ছা ‘বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন’ ইস্যুকে মাঠে ছাড়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চাকরিতে কোটা সরকার বাতিল করেছিলো। কিন্তু আদালত বহাল রেখেছে। সুতরাং কোটাবিরোধী আন্দোলন আদালতবিরোধী। এছাড়া এ আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা আছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। 

জানা গেছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিলো। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জনে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেতো ৪৪ জন। বাকি ৫৬ জন আসতেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, অনগ্রসর জেলা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা প্রতিবন্ধীদের মধ্য থেকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা। 

এই ব্যবস্থাকে চরম বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে ২০১৮ সালে দারা বাঁধে কোটাবিরোধী আন্দোলন। দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনের মুখে তখন কোটা বাতিলে একরকম বাধ্য হয় সরকার। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। যে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সম্প্রতি কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি করেনি আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল থাকছে। হাইকোর্টের ওই রায়ের পর গত ৬ জুন থেকেই তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৬ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাবে বিএনপি।বেলা সাড়ে ১১ টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব এমন ঘোষণা দিতে পারেন বলে দলটির একটি সূত্র বাংলা আউটলুককে জানায়।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন