সেনানিবাসে দায়িত্বরত দুই এনএসআই সদস্যকে মারধর, বসে দেখলেন সাবেক মহাপরিচালক!
ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্তব্যরত দুজন সদস্যকে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ জুন সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল তারিক মোহাম্মদ (টিএম) জোবায়েরের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২৪ জুন দুপুর ১২টা ৫ থেকে ১২ টা ১০ মিনিটের দিকে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক টিএম জোবায়েরকে বহনকারী গাড়ি তার বাংলো হতে বের হয়ে আর্মি এমপি ইউনিটের সামনে ইউটার্ন নিয়ে সেনাসদরের নতুন অফিসার্স মেসের প্রধান ফটকের দক্ষিণ দিকের প্রধান সড়কে এসে থেমে যায়। এ সময় পাশের রিক্সা চলাচলের লেনে এনএসআই ফিল্ড স্টাফ মো. বেলাল হোসেনকে জুনিয়র ফিল্ড অফিসার মো. শাহীন রেজা সিএসডি হতে স্টাফ রোড পর্যন্ত এলাকার কিছু দাপ্তরিক কাজের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।
এমন সময় এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালকের গাড়ির পেছন হতে এনএসআইয়ের জ্যাকেট উল্টোভাবে পরিহিত তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ফিল্ড স্টাফ বেলাল হোসেন ও জুনিয়র ফিল্ড অফিসার শাহীন রেজাকে জোর করে জাপটে ধরে পরিচয় জানতে চান। কর্তব্যরত এনএসআই সদস্য পরিচয় দেওয়ার পরও তাদের তীক্ষ্ণ পিন সদৃশ্ বস্তু দিয়ে আঘাত করে ওই তিন ব্যক্তি। পরে তাদের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। তারা জানতে চান, কেন সাবেক মহাপরিচালকের গাড়ির ছবি তুলছিল? জুনিয়র ফিল্ড অফিসার শাহীন রেজা তাদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, তার মোবাইলটি কেবল হাতে ধরা ছিল। ওই তিন ব্যক্তি এ সময় এনএসআইয়ের দুই সদস্যকে পেটাতে থাকেন। শাহীন রেজার প্যান্টের বাম পকেট থেকে এনএসআই আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরো সময় গাড়িতে বসে গ্লাস নামিয়ে ঘটনা দেখছিলেন মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের। একপর্যায়ে তার দুই দেহরক্ষী ধাক্কাতে ধাক্কাতে এনএসআইর ফিল্ড স্টাফ বেলাল হোসেনকে গাড়ির সামনে নিয়ে যান। মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন এবং গালাগাল করেন। পরে এনএসআইয়ের দুই সদস্যের পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন ফেরত না দিয়েই সাবেক মহাপরিচালক ও তার সাথে থাকা ব্যক্তিরা গাড়িতে করে স্থান ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ঘটনার সময় ওই স্থানের পাশে মিলিটারি পুলিশের কয়েকজন সদস্য কর্তব্যরত ছিলেন। তারা পুরো ঘটনাটি দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিল্ড স্টাফ মো. বেলাল হোসেন গত ১৯ জুন এনএসআইয়ের ঢাকা সেনানিবাস শাখা কার্যালয়ে যোগ দেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই জুনিয়র ফিল্ড অফিসার মোঃ শাহীন রেজা মাঠ পর্যায়ের সম্যক ধারনা দিতে বেলালকে নিয়ে ওই এলাকায় কর্তব্যরত ছিলেন।
টিএম জোবায়েরের সাথের ব্যক্তিরা কারা
সামরিক সূত্রে জানা যায়, টিএম জোবায়েরের সাথে যারা দেহরক্ষী হিসেবে ছিলেন তারা সবাই বিভিন্ন অপরাধমূলক কারণে সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে বরখাস্তকৃত বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত।
মারধরে জড়িত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- ১ প্যারা ব্যাটালিয়নের কর্পোরাল (বরখাস্ত) তাজুল ইসলাম এবং ২ প্যারা ব্যাটালিয়নের কর্পোরাল (বরখাস্ত) অলিল মাতব্বর।
এনএসআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা না প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মহাপরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনকালে টিএম জোবায়ের কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে বরখাস্তকৃত বেশ কিছু সেনাসদস্যকে তার দেহরক্ষী হিসেবে এনএসআইতে নিয়োগ দেন। উশৃংখল-বেপরোয়া স্বভাবের এই সদস্যরা আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন যা নিয়ে এনএসআইয়ের বেসামরিক সদস্যরা ক্ষুব্ধ।