কানাডার প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা
বিএনপির নেত্রীরা অনলাইনে ১০ গুণ বেশি আক্রমণের শিকার
সাবিক রশিদ
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম
গত জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপির সাথে যুক্ত নারী রাজনীতিবিদরা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের তুলনায় অনলাইনে ১০ গুণ বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্ট ও মন্তব্য বিশ্লেষণ করে সমীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, নারী রাজনীতিক ছাড়াও নির্বাচনের সময় সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও সেলিব্রিটিদের টার্গেট করা হয়েছিল।
নির্বাচনের সময় নারীদের টার্গেট করার জন্য কিভাবে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল তা বোঝার জন্য গবেষণায় ফেসবুকের ২৫ হাজার পোস্ট ও কমেন্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আক্রমণের ধরন হিসেবে ছিল অন্তরঙ্গ ছবির অপব্যবহার, ডক্সিং, ট্রোলিং, সম্মতি ছাড়াই জাল ছবি তৈরি, ম্যানিপুলেশন ও যৌন হয়রানি।
গবেষণাটি আরও দেখা গেছে, কিভাবে লিঙ্গের ভিত্তিতে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের অপমান, অবজ্ঞা এবং বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।
রুমিন ফারহানা
যেসব নারী রাজনীতিকরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা, জাইমা রহমান, জাফিয়া রহমান (আরাফাত রহমানের কন্যা), নিপুণ রায় চৌধুরী, সুলতানা আহমেদ, মমতাজ বেগম, নিলোফার চৌধুরী মনি ও হেলেনা জাহাঙ্গীরের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তি।
বিশ্লেষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন মিনা ফারাহ। তিনি সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত। এর বাইরে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি অনলাইনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদও অনলাইনে আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি।
নারী রাজনীতিকরা কেন প্রধান লক্ষ্য?
গত পাঁচ দশকের বড় সময়ই বাংলাদেশে দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী শাসন করলেও এদেশের রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত কম। গত নির্বাচনে ৫ শতাংশেরও কম আসনে নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গেছে।
কানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষাটিতে দেখা দেখা গেছে, অনলাইনে আক্রমণের লক্ষ্য করার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৈষম্য রয়েছে। আক্রমণের শিকার পুরুষরা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার- রাজনীতিক, সাংবাদিক, লেখক, ইনফ্লুয়েন্সার, অধিকারকর্মী ইত্যাদি। কিন্তু আক্রমণের শিকার নারীরা প্রধানত রাজনীতিক এবং তা-ও বিরোধী দলের রাজনীতিক।
সায়মা ওয়াজেদ
এ ধরনের আক্রমণের ফলে অনলাইনে নারীরা হুমকির মুখে পড়ছেন। পাশাপাশি তারা রাজনীতি, আন্দোলন, এমনকি ভোটের ক্ষেত্রেও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানের আগেও শীর্ষস্থানীয় নারী রাজনীতিকরা চরিত্র নিয়ে ভয়াবহ আক্রমণের হয়েছেন। যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা বার বার ধর্ম ও বৈবাহিক অবস্থা নিয়ে মিথ্যা প্রচারের শিকার হয়েছেন। এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে। একই ভাবে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারি দল ও সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমের দ্বারা সংঘবদ্ধ চরিত্রহননের তৎপরতার শিকার হয়েছেন।
শামা ওবায়েদ
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফৌজিয়া আফরোজ বলেন, রক্ষণশীল সংষ্কৃতি ও রীতিনীতির প্রাধান্য, সঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচার নারীদের রাজনীতিতে আরও প্রান্তিক করে তোলার হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
ফৌজিয়া বলেন, গ্রামাঞ্চলে যারা থাকেন, যাদের প্রযুক্তিগত জানাশোনা কম, তারা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য বেশি বিশ্বাস করেন।