Logo
Logo
×

সংবাদ

নতুন সমঝোতা স্মারক

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত থেকেও চীনকে হঠাতে চায় ভারত

Icon

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত থেকেও চীনকে হঠাতে চায় ভারত

ছবি: সংগৃহীত

নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রথমবার দেশটি সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লি নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে সাতটি নতুন ও তিনটি নবায়নকৃতসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। 

দুই দেশের নেতাদের বৈঠকে রেল ট্রানজিটের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। তিস্তা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয় দুই সরকার প্রধানের ওই বৈঠকে। তবে এবারে শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষায় সহযোগিতার বিষয়টিও ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্ব পায়। 

এই গুরুত্ব যতটা না বাংলাদেশের জন্য, তার চেয়ে বেশি চীনকে হঠাতে। সোজা ভাবে বললে, চীনের বাংলাদেশ ঘেষা মনোভাব দূর করতেই ভারতের এই পদক্ষেপ। তবে দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংযোগ, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সমুদ্র সম্পদ, বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অংশীদারত্বের বিষয় স্থান পায়।

হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষ সাংবাদিকদের মোদি বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সিইপিএ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিকার বিষয়ে মোদি বলেন, দুই পক্ষ সামরিক সরঞ্জাম তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভে যোগদানে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

প্রসঙ্গত, উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দেওয়াসহ নানা সহযোগিতা দিয়ে বাংলাদেশকে নিজের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে টেনে নিতে চীনের তৎপরতায় নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন। ২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ দুটি সাবমেরিন কিনেছিল। বাংলাদেশের কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটিও তৈরি করছে চীন, যা ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার জন্য অস্বস্তির কারণ। তাই ভারত প্রতিরক্ষা খাতেও বাংলাদেশকে সহযোগিতায় আগ্রহী।

এদিকে, বৈঠকের পর শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে খুব ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদী থেকে পানি বণ্টন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় মধ্যে নিয়ে আলোচনা করেছি।

শেখ হাসিনার এই সফরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা ভারতকে বাংলাদেশে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল- মোংলা ও মিরসরাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিটের বিষয়টি খুব গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশে বিরোধী দল বলছে, এই ভারতকে দেওয়া এই সুবিধা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করবে। 

বাংলাদেশের অ্যাক্টিভিস্টরা ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার এই সফরে টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল ও সবুজ অংশীদারত্ব বিষয়ক নতুন দুটি সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে।

চীনের সঙ্গে নানাবিধ অংশীদারিত্ব নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ আছে। এখন নয়াদিল্লি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন শেখ হাসিনা। খুব শিগগিরই তিনি বেইজিংও সফর করবেন। তার ওই সফরে চীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। নয়াদিল্লি অবশ্য হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে চীনের ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া এড়াতে সতর্ক করে আসছে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। তিস্তা প্রকল্পে চীনের আগ্রহ ভারতের উদ্বেগকে দ্বিগুন করে তুলে। 

উল্লেখ্য, তিস্তার উৎপত্তি ভারতের সিকিমে। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তির ব্যাপারে নয়াদিল্লি ও ঢাকার উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সম্মতি দিচ্ছেন না বলে গত কয়েক বছর ধরে আটকে আছে। মমতার যুক্তি, এই চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে পানির ঘাটতি দেখা দেবে। যা রাজ্যের কৃষকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এসব কারণে যখন তিস্তা চুক্তি নিয়ে সংকট কাটছিল না। এমন অবস্থায় তিস্তা নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। যেটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা হিসেবেই পরিচিত।

বন্যা প্রশমন, ভাঙন হ্রাস ও ভূমি উদ্ধারে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উজানে একটি বহুমূখী ব্যারেজ নির্মাণেরও চিন্তা রয়েছে বাংলাদেশের। যেটি নিয়ে একটি রুপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। আর এই তিস্তা প্রকল্পে নজর ছিল চীনের। এমনকি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবও দিয়েছিল দেশটি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের এত কাছে একটি প্রকল্পে চীনের ভূমিকা নিয়ে ঢাকাকে তার উদ্বেগ জানিয়েছিল। এবার শেখ হাসিনার সফরে সেই প্রকল্পে আগ্রহ দেখাল ভারত। শুধু তাই নয়, প্রকল্পে সহায়তার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দলও পাঠাবে নয়াদিল্লি। এর মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি নিয়ে চীনের আগ্রহের ব্যাপারে বাংলাদেশের ভাবনার জায়গা বাড়ল বটে।  

সূত্র: ডেকান হেরাল্ড, এবিসি নিউজ

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন