Logo
Logo
×

সংবাদ

‘আত্মরক্ষার’ নামে বাংলাদেশিদের বুকে-পিঠে-মাথায় গুলি করে মারছে বিএসএফ

মুক্তাদির রশীদ

মুক্তাদির রশীদ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম

‘আত্মরক্ষার’ নামে বাংলাদেশিদের বুকে-পিঠে-মাথায় গুলি করে মারছে বিএসএফ

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সফরে এখন ভারতে অবস্থান করছেন। আগামীকাল শনিবার (২২ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি একান্ত বৈঠক করবেন বলে জানা যাচ্ছে। মোদি ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার ১৫ দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সফর। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দুদেশের শীর্ষ নেতার এ বৈঠকে অর্থনীতি, যোগাযোগ ও জ্বালানি বিষয়ে আলোচনা হবে।  

সদ্য লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানাতে সবার আগে ছুটে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যেমন রয়েছে আবেগ, তেমনি আছে তিক্ততা। আর এই তিক্ততার বড় একটি কারণ হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। দিল্লির তরফ থেকে বারবার সীমান্ত হত্যা বন্ধের আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যত হত্যাকাণ্ড বন্ধ তো হয়ইনি, বরং বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে এসে গুলির ঘটনা দেশের মানুষকে সংক্ষুব্ধ করেছে। সেই সাথে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি দুদেশেরই মানবাধিকার কর্মীদের। 

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) পক্ষ থেকে ঢাকা ও দিল্লিতে বারবারই দাবি করা হয়েছে, কেবলমাত্র ‘আত্মরক্ষার্থেই’ তারা গুলি ছুড়ছেন। এমনকি এসব ক্ষেত্রে তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র নয় বা নন লিথাল উইপন ব্যবহার করছেন বলে দাবি করে আসছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তে নিহত ব্যক্তিদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করছে ভারত সরকার।  কিন্তু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির নিজস্ব গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। 

অন্যদিকে, হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটার পর মরদেহের আঘাত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে বুক,  পিঠ বা মাথা নিশানা করে গুলি ব্যবহার করছে বিএসএফ এবং বাংলাদেশি নাগরিকরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে অথবা জিরো লাইনে অবস্থানকালে ঘটনাগুলো ঘটছে। কোন কোন ঘটনায় মৃতদেহ ভারতে পাওয়া গেছে, আবার অনেক ঘটনায় মৃতদেহ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য এবং সম্পর্ককে আরো তিক্ত করে দিচ্ছে।  

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত অন্তত ১১ জন বাংলাদেশি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৯ জন।  অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি বলছে, জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মে মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন এবং আরো ৩০ জন আহত হয়েছেন। 

গত এপ্রিল মাসের ২ তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন সাইফুল ইসলাম । তার বয়স ছিলো ৩০ বছর। তার ভাই রবিউল ইসলাম বলছেন, সাইফুলকে পিঠে একটা গুলি করা হয়েছে, যা তার বুক দিয়ে বের হয়ে এসেছে। 

গত ৯ এপ্রিল বেলা ২টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তের ৯১৩ নম্বর মেইন পিলারের কাছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে কাছ থেকে গুলি ছোড়ে বিএসএফ

মে মাসের ৩ তারিখে বিএসএফের গুলিতে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে মারা যান বাংলাদেশি কৃষক আবুল কালাম দুখু। তার বয়সও ৩০ ছিল। পাটগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর শাহানুর রহমান জানান, একটা গুলি তার বুকের বাম পাশ ফুটা করে চলে গেছে। 

গত মে মাসের ৮ তারিখে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কয়াত্রা বাংলাদেশে আসেন। ঢাকায় পৌঁছানোর ১৮ ঘণ্টা আগে পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া সীমান্তে বিএসএফ দুই বাংলাদেশিকে গুলি বর্ষণে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল জলিলের বয়স ২৪ বছর, আর ইয়াসিন আলীর বয়স ছিল ২৩ বছর।  

পঞ্চগড়ের বিজিবি থেকে জানানো হয়, ভারতীয়রা দুটো গুলি করেছে। যা একজনের মাথায় এবং অন্যজনের কোমরের উপরের অংশ লাগে। 

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সম্প্রতি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডগুলো অধিকাংশ ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে হয়ে থাকে। তারপরও তারা ভারতকে প্রতিটি ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ লিপি পাঠান। দু'দেশে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীদের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪ তম বৈঠক গত মার্চ মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে দু’দেশের সুসম্পর্ক বিবেচনা করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনার জন্য আহ্বান জানান। 

বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক নীতিন আগারওয়াল সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

সীমান্ত হত্যা বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেছেন। তিনি বলছিলেন, ক্রমাগত সীমান্ত  হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশকে হতাশ করেছে। ভারতের পাকিস্তান সীমান্তে এমনটি শোনা যায় না, এমনটি শোনা যায় না চীন বর্ডারেও।  

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, ২০২৩ সালে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছিল ৩০ বাংলাদেশি, ২০২২ সালে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুসহ নিহতের সংখ্যা ২৩ এবং ২০২১ সালে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুসহ নিহত হয় ১৭ জন।

অন্যদিকে, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ১২৩৬ বাংলাদেশি নিহত এবং ১১৪৫ জন আহত হয়েছেন।

বিজিবির নিজস্ব গবেষণা কী বলছে

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে নিহত হওয়া বাংলাদেশিদের ঘটনাগুলোকে নিয়ে একটা গবেষণা করে ২০২০ সালে। 

গবেষণায় বলা হয়, ‘বিএসএফ মাত্র দুই থেকে তিন রাউন্ড ফায়ার করেই বাংলাদেশি দুইজন নাগরিককে হত্যা করছে, এতে তাদের পূর্বপরিকল্পনার ধারণা করা যায়।’

কিন্তু ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহতের ঘটনা নিয়মিতভাবে ঘটলেও ভারতীয় নাগরিকদের নিহতের ঘটনা ঘটার তেমন কোনো নজির নেই। এমন নয় যে, ভারতীয়  নাগরিকরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে না। সেসব ঘটনার ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিকদেরকে সসম্মানে বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। 

অবৈধ অনুপ্রবেশ, গরু চোরাচালান বা মাদকবহন করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত আহত ও নিহতদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একটি ইউনিট। তারা দেখতে পান, বিএসএফের গুলিবর্ষণের কারণে ৬৭জন নিহত ও ১০৯ জন আহত হন। 

এসব ঘটনায় ২১% গুলি মুখে বা মাথায় লেগেছে।  ৪৮ % শতাংশ গুলি বুক, পেট, হাত ও পিঠে লেগেছে। ৩১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোমরের নিচে গুলি লেগেছে। আর সবচেয়ে বেশি গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে রংপুর অঞ্চলে। 

বিএসএফের গুলি যেসব স্থানে লেগেছে (১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৫ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত)। 

১২৮টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মধ্যে ৯৮টি গুলি বর্ষণের ঘটনা। এছাড়া নির্যাতন ও মারধরের ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়৷ 

২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত ১৪৩টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯৮টি গুলি ও নির্যাতনের ঘটনা রাত্রিকালীন ও ৪৫টি ঘটনা দিনে ঘটেছে। 

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বিএসএফ গুলিবর্ষণ ছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিকদের দা, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রসহ বুট দিয়ে নির্যাতন বা মারধর করে নৃশংসভাবে আহত বা নিহত করছে। যা আন্তর্জাতিক আইনে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে প্রতীয়মান। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ সনদের আর্টিকেল ২.৪ মোতাবেক অন্য দেশের উপর হুমকি বা শক্তি প্রয়োগে দূরে থাকতে হবে। ১৯৭০ সালে জাতিসংঘের পরিষদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সম্পর্কিত ঘোষণাটি যথাযথভাবে মেনে চললে সীমান্ত নির্যাতন ও হত্যা বহুল অংশে কমে যাবে। আর্টিকেল মোতাবেক আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।  

‘তবে সুপরিকল্পিতভাবে বিএসএফ তার অপব্যবহার করছে বলে ধারণা পাওয়া যায়। জাতিসংঘ সনদ মোতাবক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের ব্যাপারে বাংলাদেশ ভারত নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপনে সীমান্ত হত্যা বহুলাংশে হ্রাস পাবে।’

বিজিবির নিজস্ব গবেষণায় সুপারিশ করা হয়, বাংলাদেশি কোনো গরু চোরাচালানকারী বা রাখাল বা সাধারণ নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করলেই বিএসএফ তাদের গুলি ও নির্যাতন না করে বিজিবির নিকট হস্তান্তর করা বা ভারতীয় প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য দু’দেশ উদ্যোগ নিতে পারে। 

সেখানে বলা হয়, বিএসএফ নিজেদের আত্মরক্ষার অজুহাতে যাতে বাংলাদেশের নাগরিককে গুলি চালিয়ে বা নির্যাতন করে হত্যা না করে, তার জন্য সদর দপ্তর রিজিয়ন সেক্টর বা ব্যাটালিয়ান পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে জোরালোভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা প্রয়োজন। 

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একজন বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার দুই দিন পর, নিহত সিপাহী মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ যশোরের শার্শার শিকারপুর সীমান্তের কাছে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।

সরকারের বক্তব্য 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বরাবরই সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনতে ভারতীয় বিএসএফকে অনুরোধ জানিয়েছেন।  

গত মার্চ মাসে বিএসএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্ত হত্যা বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। 

বাংলাদেশ ও ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা কী বলছেন 

আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল সম্প্রতি বলেছেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সদস্যসহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতীয় বিএসএফের এহেন আচরণ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের অবজ্ঞারই পরিচায়ক।’

আসক, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেকোনো ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধে ভারত সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিক আহ্বান জানায়। 

অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি মনে করে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান এবং উভয় সরকারই সীমান্তে বেসামরিক জীবন রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে। 

‘বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেও এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমরা উভয় দেশের কর্তৃপক্ষকে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গঠনমূলক সংলাপ এবং সীমান্তের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে শূন্যে নিয়ে আসার বিষয়ে আহ্বান জানাই।’—যোগ করে সংস্থাটি। 

পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন—মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ বা মাসুম দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি কিরীটি রায় বাংলা আউটলুককে বলেন, ‘হত্যা সর্বকালে, সর্বদেশে নিন্দিত, তাই আমরা,মানবাধিকার কর্মীরা হত্যা তথা নির্যাতনের বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত ও প্রথাগত হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে; হত্যাকারীরা সরকারের বাহিনী। যে দেশের সরকারের সংবিধানে ও আইনে হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ- যার সাজা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সেটিই ঘটিয়ে চলেছে তার জন্মলগ্ন থেকে।’

কোন অঞ্চলে হতাহতের সংখ্যা কত (১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৫ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত)

কিরীটি রায় বলেন, ‘এবং এই হত্যাকাণ্ডের জন্য একজন বিএসএফ কর্মীরও সাজা হয়নি। ফলে বিএসএফের দ্বারা সীমান্ত হত্যা ভারত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও সমর্থনপুষ্ট। ভারতের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৭ ধারা বলে দোষী বিএসএফ কর্মীকে নিঃশাস্তি (impunity) করে।’

ভারতীয় এ মানবাধিকার কর্মী জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পৃথিবীর রক্তাক্ত সীমান্তগুলির মধ্যে অন্যতম। হত্যাকারী হচ্ছে বিএসএফ, যা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। এই হত্যালীলা বন্ধ করতে গেলে ভারত রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে, কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে; শুধু লোক দেখানো বিবৃতি দিলে হবে না; হত্যাকারীর সাজা ও মৃত ব্যক্তির ন্যায়বিচারের বন্দোবস্ত করতে হবে—যা টেকসই উন্নয়নের ১৬ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পড়ে। 

পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকেও সীমান্তে পাচার রোধ করার জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে। বিজিবিকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কেউ ভারতের সীমান্ত দিয়ে বেআইনি পারাপার করতে না পারে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ নিয়ে বাংলাদেশি জনগণের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে ভারত সরকারের সাথে সম্পর্ক স্থির করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএসএফ বাহিনী মূলত উত্তর ভারতের হিন্দিভাষী মানুষের দ্বারা গঠিত। এদের দ্বারা এই মানুষ হত্যা, তথা বাঙালি হত্যা মানা যায় না। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ভূটানের সীমান্ত এত রক্তক্ষয়ী নয়; এমনকি পাকিস্তান চীন সীমান্তেও বাংলাদেশ সীমান্তের মতো হিংসাজনক নয়। ভারতের বৈদেশিক নীতির এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বৈষম্যমূলক আচরণের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন।’

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন