সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত নভেম্বর থেকে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান সংঘাতের কারণে আবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামতে পারে। এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা নানা কৌশলেসীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী বিষয়ক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনের শীর্ষ নির্বাহী এবং বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমানও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
শরণার্থী বিষয়ক ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাখাইনে যে সংঘাত চলছে, তার ফলে ওই রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফের বাংলাদেশে আসার প্রবণতা উসকে দিতে পারে।
অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন রোহিঙ্গা এরই মধ্যে নানাভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ধারনা, কিছু মানুষকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।’
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি সেনা ছাউনি এবং পুলিশ স্টেশনে একযোগে বোমা হামলা ঘটায় রোহিঙ্গাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এর জবাবে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ভয়াবহ সেই অভিযানে সেনা সদস্যদের হাতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে। ওই সময় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে।
ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থকে আশ্রয় দিতে পারবে না বাংলাদেশ। চীনের মধ্যস্থতায় আশ্রিত এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন কারণে এই প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘাত শুরু হয়েছে । আরাকান আর্মি একের পর এক শহর ও গ্রামের দখল নিচ্ছে। গত সপ্তাহে রাখাইনের দুই সীমান্তবর্তী শহর বুথিডং এবং মংডুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই দুই শহরে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা থাকে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে আটকা পড়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ইউএনএইচসিআর আমাদের একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে ইউএনএইচসিআর বলেছে—রাখাইনের পরিস্থিতির উত্তরোত্তর অবনতি ঘটছে। সেখানে আরও রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা অসহায়। তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।’
তবে ইউএনএইচসিআরের সেই চিঠির কোনো জবাব এখনও দেওয়া হয়নি বলে জানান মিজানুর রহমান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, তবে কারও ফোন রিসিভ হয়নি। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে আর আশ্রয় দেওয়া হবে না বলে যে নীতি নিয়েছিল বাংলাদেশ, তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।