কোরবানির জন্য রাজধানীর সাদেক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা মুশফিকুর রহমান ইফাত এখন আলোচনার তুঙ্গে। তাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বলা হচ্ছে, ইফাত নাকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে। তবে ইফাতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই বলে দাবি করেন মতিউর রহমান। আর ইফাতের দাবি, তিনি কোনো ছাগল কেনেননি।

এসব আলোচনার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা।

নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন,  আমি যা বলছি তা-ই সত্য। ইফাত আমার মামাতো বোন শাম্মী আক্তার শিবুর সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। ইফাত এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। এ সংসারে তিন ছেলে মেয়ে। এক মেয়ে কানাডায় থাকে।

নিজাম উদ্দিন হাজারী আরও বলেন, 'ইফাত মাকে নিয়ে ধানমন্ডির বাসায় থাকেন বলে জানি। আমার মামাতো বোনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে। মতিউর রহমান নিয়মিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কিন্তু এখন তিনি কেন তাঁর সন্তানকে অস্বীকার করছেন, তা আমার জানা নেই। তিনি নিজেই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ইমপেরিয়াল সুলতানা ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন ইফাত। তবে আজ সকালে সেই বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ইমপেরিয়াল সুলতানা ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, ইফাত মঙ্গলবার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর আর আসেননি।

ওই বাসার এক বাসিন্দা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ইফাতের বাবা মতিউর রহমানই। ইফাতের বাবা দুই বিয়ে করেছেন। মতিউরের প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ। তিনি বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মতিউর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন বসুন্ধরায়। 

তিনি আরও বলেন, মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার। মুশফিকুর রহমান ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তারের সন্তান। থাকেন ধানমন্ডির বাসায়। আর তার মা থাকেন কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাটে। ইফাতের আরেক বোন ফারজানা রহমান ইস্পিতা। তিনি থাকেন কানাডায়। 

এখন ইফাতের বয়স ১৯ বছর। তবে তিনি ২৩ বছর বয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইফাতের বাসার নিচতলা কোরবানি উপলক্ষে দামি ঝাড়বাতি ও রঙ্গিন আলোয় সাজানো হয়েছে। বেশকিছু বড় গরু নিয়ে বাসায় ঢুকছেন ইফাত। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারের কোরবানিতে ইফাত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার অন্তত সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে এ বছর ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। গত বছর কিনেছিলেন ৬০ লাখ টাকার পশু।

ইফাত এ বছর সাতটি খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। তবে ফেসবুকে বিতর্কের মুখে সাদিক এগ্রো থেকে কেনা ওই ছাগল তিনি আর বাসায় নেননি। অন্য খামার ও হাঁট থেকে কেনা পশু তিনি ডেলিভারি নিয়েছেন।

জানা গেছে, ইফাত এবার সাদিক এগ্রো ছাড়াও সামারাই এগ্রো, রাহমাহ ক্যাটেল ফার্ম, ব্রাউনিজ র্যা ঞ্জ, হাম্বা পাগলা এগ্রো এন্ড ডেইরি ফার্ম, সারা এগ্রো, বুদ্দু ক্যাটেল ফার্ম এবং গাবতলী হাঁট থেকে গরু কিনেছেন। সব মিলিয়ে তিনি ৭০ লাখ টাকার পশু কিনেছেন। এর সবগুলো ভিডিও রয়েছে।

এছাড়া পাখি পুষতে পছন্দ করেন ইফাত। আড়াই লাখ টাকার পাখি আছে তার ঘরে। এছাড়া তাঁর ঘরে মিশরের বাজরিগার পাখি, অস্ট্রেলিয়ার গালা কাকাতুয়াসহ আছে নানা প্রজাতির বেড়ালও।

এসব বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার মতিউর রহমানকে ফোন করা হয়েছিল। তবে তিনি রিসিভ করেননি। আর ইফাতের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তাঁর মোবাইল নম্বরটির জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা। ওই পরিচয়পত্রে ইফাতের বাবা মতিউর রহমান এবং মায়ের নাম শাম্মী আক্তার লেখা রয়েছে। ঠিকানায় উল্লেখ আছেু ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ৪১ নম্বর বাসা।