Logo
Logo
×

সংবাদ

সরকারের প্রচ্ছন্ন ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ১১:১৭ এএম

সরকারের প্রচ্ছন্ন ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে

দেশের সভরেন গ্যারান্টি আগামী অর্থ বছরে ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে । এর ফলে বিদেশি ঋণ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ঋণ পাওয়া কষ্টকর হয়ে উঠবে । বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওযার ক্ষেত্রে সভরেন গ্যারান্টির শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে উঠে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, বর্তমানে সরকারের সভরেন গ্যারান্টির পরিমাণ এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা, গত অর্থবছর যা ছিল ৯৮ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরে গ্যারান্টি বেড়েছে ১৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা । শতকরা হারে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ । এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সভরেন গ্যারান্টি ছিল ৫১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছর সরকারের মোট সভরেন গ্যারান্টির ৫২ দশমিক ২৩ শতাংশ ছিল বিদ্যুৎ খাতে।

দেখা গেছে, দেড় দশকে সরকারি-বেসরকারি খাতে ১০০-এর বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য নেয়া হয়েছে কঠিন শর্তের ঋণ। এসব ঋণের জন্যও সরকার দিয়েছে সভরেন গ্যারান্টি। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতের ১৮টি প্রকল্পে রয়েছে সভরেন গ্যারান্টি, যার পরিমাণ প্রায় ৫৩ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, যা সরকারের মোট সভরেন গ্যারান্টির প্রায় ৪৬ শতাংশ।

আগামী বছর বিদ্যুৎ খাতে মোট সভরেন গ্যারান্টির অর্ধেকের বেশি দেয়া হয়েছে দুটি প্রকল্পে। এর একটি হলো পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার জন্য সরকারের দেয়া গ্যারান্টি ১৬ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার জন্য গ্যারান্টির পরিমাণ ১৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ দুই প্রকল্পেই সরকারের সভরেন গ্যারান্টির পরিমাণ ৩৩ হাজার টাকা।

এর আগে ২০২১-২২ অর্থ বছর সরকারের সভরেন গ্যারান্টি ছিল ৯২ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। ওই বছর বিদ্যুৎ খাতে সভরেন গ্যারান্টি ছিল ৪৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট গ্যারান্টির ৫৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

অর্থ বিভাগ বলছে, সরকার বিভিন্ন সময় নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বার্থে রাষ্ট্রমালিকানাধীন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত ঋণের জন্য গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এসব ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে তার দায় সরকারের ওপর বর্তাবে। তাই সরকারের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থার ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তবে সভরেন গ্যারান্টিজনিত আর্থিক ঝুঁকি কমাতে এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করতে চাইছে সরকার।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সভরেন গ্যারান্টি সরকারের আর্থিক ক্ষমতার ওপর চাপ তৈরি করে। আর বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাই বর্তমানে লোকসানে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরকারের কাঁধেই দায় চাপবে। এছাড়া বর্তমানে চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন-ক্ষমতা রয়েছে। তাই অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করে সরকারের সভরেন গ্যারান্টির চাপ কমানো উচিত।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা এবং পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ ভাবে সভরেন গ্যারান্টি বেড়ে যেতে থাকলে অবশ্যই সরকার এক সময় বেকায়দায় পড়বে। যেসব কোম্পানির জন্য এই গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে তারা কোনো কারণে ঋণের টাকা ফেরত দিতে না পারলে সরকারকে এ টাকা ফেরত দিতে হবে।

তিনি বলেন , বিদেশি কোম্পানির সভরেন গ্যারান্টি দিলে অবশ্যই তা ডলারে পেমেন্ট করতে হবে, যা ডলার সংকটের কারণে অবশ্যই একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দেবে। তিনি আরো বলেন , সরকারকে এ বিশাল ঋণের জাল থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই সভরেন গ্যারান্টি কমিয়ে রাখতে হবে।

২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারের সভরেন গ্যারান্টি ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা আর ২০১৯-২০ অর্থ বছর ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। ওই দুই অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে সভরেন গ্যারান্টি ছিল যথাক্রমে ৪১ হাজার কোটি ও ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে ওই দুই বছর বিদ্যুৎ খাতে সভরেন গ্যারান্টি ছিল যথাক্রমে মোট গ্যারান্টির ৫৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ৫৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এদিকে জ্বালানি তেল আমদানিকারক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিভিন্ন দেশ থেকে কঠিন শর্তের ঋণে তেল আমদানি করে থাকে। এজন্য সরকারকে সভরেন গ্যারান্টি দিতে হয়। বর্তমানে এর পরিমাণ সাত হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, গত অর্থবছর যা ছিল চার হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থ বছর বিপিসির জন্য সভরেন গ্যারান্টি ছিল ১১৯৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের বর্তমান সভরেন গ্যারান্টি ৬১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছর যা ছিল ৩৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

অন্যান্য খাতের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কৃষিঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) সভরেন গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার। কৃষি খাতে এ গ্যারান্টির পরিমাণ তিন হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি ব্যাংকের ১৩৯৯ কোটি টাকা এবং রাকাবের দুটি স্কিমের বিপরীতে গ্যারান্টি ২১৭৩ কোটি টাকা।

একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংককে চারটি স্কিমের বিপরীতে সভরেন গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে ১৭৫০ কোটি টাকা। এছাড়া পণ্য আমদানির জন্য টিসিবিকে দেয়া গ্যারান্টির পরিমাণ ২৪৩২ কোটি টাকা, আনসার ভিডিপি ব্যাংককে ৯০০ কোটি টাকা এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে ৮৭৮ কোটি টাকা। এর বাইরে বিজেএমসিকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংগ্রহের জন্য ৯০ কোটি টাকা গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ কেনার জন্য দেয়া গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩৯৯ কোটি টাকায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পে ৭২৫ কোটি, পলাশ ঘোড়াশাল সার কারখানাকে ১০ হাজার ১১৩ কোটি, বিএডিসিকে সার আমদানির জন্য দেয়া গ্যারান্টি ১৮ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা এবং বিসিআইসিকে সার আমদানির জন্য ৮৯৮৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সভরেন গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন