এনআইডি জালিয়াতি
হারিছ ও তোফায়েলের সাজা হতে পারে ৭ বছর, দণ্ড হতে পারে আজিজেরও
হারিছ আহমেদ, আজিজ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বানানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন অনুযায়ি তাদের অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। এ কাজে সুপারিশ করায় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজেরও দণ্ড হতে পারে।
এ বিষয়ে আইনজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে গিয়ে অন্যান্য আরো ডকুমেন্টস করেছেন সেক্ষেত্রে জালজালিয়াতির বিধানটিও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। এটি প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। যদিও এটি প্রমাণ করা সময়সাপেক্ষ।
এ বিষয়ে অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বাংলা আউটলুককে বলেন, জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সে কারনে তাদেরকে এখনই অপরাধী বলা যাবে না। তবে নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী এ ধরণের অপরাধ কেউ করলে তার বিরুদ্ধে ১ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর যদি জালজালিয়াতি বিষয়টি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে এই দণ্ডের মাত্রা আরো বাড়বে। যদিও এখানে এ বিষয়টি প্রমাণ করা অনেকটা দুরুহ কাজ।
তিনি আরো বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশনের প্রথম কাজ হবে জাতীয় পরিচয় ব্লক করে। অর্থাৎ তারা যে সব সুবিধাগুলো জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পেতেন সেগুলো পাবেন না। তারপরের বিষয়টি আদালতের।
এদিকে জালজালিয়াতির ওই ধারায় কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহীতার ক্ষেত্রেই নয় সাজার বিধান রয়েছে তাকে সহায়তাকারীর বিরুদ্ধেও। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করিবার কাজে সহায়তা বা উক্তরূপ পরিচয়পত্র বহনে প্ররোচনা প্রদান করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
জানা গেছে, আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ নিজেদের নামের পাশাপাশি বাবা-মায়ের নামও বদলে ফেলেছেন। তোফায়েল নিয়েছেন দুটি এনআইডি। একটি তানভীর আহমেদ তানজীল নামে, আরেকটি আসল নামে। আর হারিছ আহমেদ এনআইডি নেন মোহাম্মদ হাসান নামে।
মোহাম্মদ হাসান নামে করা এনআইডিতে হারিছ আহমেদ নিজের ছবি পরিবর্তন করেন ২০১৯ সালে। সেসময় তার ভাই তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এ কাজে তাকে সুপারিশ করেন।
কেবল এনআইডিই নয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্ত্রীদেরসহ পাসপোর্টও তৈরি করেছেন তারা। এসময় গণমাধ্যমে বিষয়টি বেশ আলোচনা সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। এসময় দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও এ বিষয়ে ইসিকে চিঠি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার এ বিষয়ে ওই তদন্ত কমিটিটি গঠিত হয়।
জানা গেছে, দেশের একাধিক থানা ও আদালতের নথিপত্র, সাজা মওকুফ চেয়ে (জোসেফের জন্য) মায়ের করা আবেদনসহ সাজা মওকুফের সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ ও জোসেফের বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ ও মায়ের নাম রেনুজা বেগম লেখা আছে। কিন্তু হারিছ যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়েছেন, তাতে বাবার নাম সুলেমান সরকার এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু তানজীল নামে নেওয়া জোসেফের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে বাবার নাম দেখানো হয়েছে সোলায়মান সরকার এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম।যদিও তোফায়েলের আসল নামে নেওয়া এনআইডিতে বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ, মায়ের নাম রেনুজা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে।
জেনারেল আজিজের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ভাই হারিস ও জোসেফ ২০১৯ সালে প্রায় ৫লাখ ডলার (পাঁচ কোটি টাকা) খরচ করে সস্ত্রীক ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র এন্টিগা বারবুডার পাসপোর্ট কেনে। জেলে আটক জোসেফ কীভাবে এত টাকা পেলেন তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অভিযোগ আছে, এ কাজেও তাদের সহায়তা করেন জেনারেল আজিজ।