রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উল্টোদিকে বন্ধ দোকানের সাটারে ঝুলিয়ে গামছা বিক্রি করছিলেন নরসিংদীর মোহাম্মদ আলী। শুক্রবার বিকেলে এক রিকশাওয়ালা তার কাছে একটি গামছার দর করেন। ১২০ টাকার গামছাটি ৮০ টাকা বলায় সেটি কিনতে পারেননি শামসু নামের ওই রিকশা চালক।
তাদের সঙ্গে আলাপ হয় বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে। তাদের দুজনের কেউই এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না বলে জানালেন। পরে সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেওয়া হলে মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকারের বাজেট বুঝি না, আমি সংসার বুঝি। সব কিছুর যে দাম তাতে সংসার চালোনোই দায় হয়ে পড়েছে। গামছার দাম বেড়েছে কিন্তু বিক্রি করতে গেলে ক্রেতা বেশি দামে কেনে না।
রিকশা চালক শামসুও জানালেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা পাই তার বেশিরভাগই গ্রামের বাড়িতে পাঠাই। নিজে কোনো রকম ঢাকায় থাকি। বরিশালের উজিরপুরের শামসু জানান, ঢাকা শহরে অটো রিকশা বেড়েছে। রিকশা চালিয়ে মজা নেই। ভাবছি ঢাকা ছেড়ে বাড়ি চলে যাব। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কি করবো সেই কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
বাজেট বিষয়ে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা সারোয়ার আলমের সঙ্গে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মানুষ পিষ্ট। প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। প্রতিদিনই বাড়ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য। যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়বে। গরিব আরও গরিব হবে, ধনী আরও ধনী হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকলে প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দাম নিয়ন্ত্রণে নেই সরকারের কোনো কার্যকারী উদ্যোগ। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এর মাঝে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে টিকে আছি। দুই বছর আগে এক কেজি ইলিশ কিনে খেয়েছিলাম। বাচ্চারা গরুর মাংস খেতে চাইলেও কিনে খাওয়াতে পারিনি। বাচ্চাদের বলেছি, কোরবানির সময় ভালো মাংস পাওয়া যায়, তখন সবাই মিলে খাবো।
মুঠো ফোনে কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্ত ও অল্প আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুসংবাদ নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য বাজেটে কার্যকারী কোনো পদক্ষেপ নেই। এ বাজেট জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে।
রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিডিয়া কর্মী বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। এ সঙ্কটের মধ্যে সরকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছে তাতে গরীবের জন্য বিশেষ কোনো সুখবর আছে বলে মনে হয় না। উপরন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে গণমাধ্যমের জন্যও কোনো নির্ধারিত বক্তব্য নেই।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রযোজনীয় কিছু পণ্যের দর কমানো হবে এমন ঘোষণা থাকলেও শুক্রবার বাজারে তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে দোকানিরা বলছেন, প্রতিবারের ন্যয় বাজেট পাশ হওয়ার পর এর প্রভাব পড়বে। যদিও যেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেগুলো বাড়তি দরেই বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।