ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ৫ মিলিয়ন ডলার লোপাট, ফাইল গায়েব!
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। তারা দূতাবাসের জরুরি তহবিলের এক লাখ ৭৬ হাজার ডলার আত্মসাত করেছে।
পাশাপাশি দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে সরিয়েছে হয়েছে আরও প্রায় সোয়া তিন লাখ ডলার। সেই চুরির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংবাদমাধ্যম মানবজমিন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুধু সিডর ইমার্জেন্সি ফান্ড বা দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট নয়, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন (বাংলাদেশ হাউস) মেরামতেও ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
দায়িত্বশীল সূত্রে বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, সবচেয়ে বড় দুর্নীতি করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির পাশের এলাকা মেরিল্যান্ডের বেথেসডা হাইবরোতে বাংলাদেশ হাউস নির্মাণে। জমিসহ ওই বাড়ির বাজারমূল্য ৪.২৩ থেকে ৫.১ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাড়িটির শুধু কাঠামোগত সংস্কার এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনের বিল দেখানো হয়েছে ৬ মিলিয়ন ডলার। ৬০ কোটির বেশি টাকার সেই সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিংষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়িটি উদ্বোধনের কয়েক মাস পরই ছাদে ফাটল দেখা যায়।
অর্থ গেছে ক্যাসিনোতে: বাংলাদেশ দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বেহাত হওয়া এই কয়েক লাখ ডলারের একটি বড় অংশ ক্যাসিনোতে গেছে বলে দূতাবাসকে জানিয়েছে আমেরিকান সিটি ব্যাংক। তারা এর প্রমাণ হিসাবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার এটিএম কার্ডের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দিয়েছে। দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট কয়েক মাসের ব্যবধানে খালি করার বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় ব্যাংকের ম্যানেজার চিঠি দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করেন।
নথিপত্রের তথ্যমতে, ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের সময় এ ঘটনা ঘটে। তখন দূতাবাসের তৎকালীন হেড অব চ্যান্সারি ছিলেন ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। তার স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাবটি ক্লোজ করা হয়। ২০২১ সালের মার্চে অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হলেও তা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ দূর না হওয়ায় পরবর্তীতেও দূতাবাসের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে।
তদন্ত ফাইল: ওয়াশিংটনে চুরির তদন্তের ফাইল গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। তবে তা অস্বীকার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসন অনুবিভাগ। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, ফাইলটি গায়েব নয় বরং এটি প্রক্রিয়াধীন আছে।
বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আবদুল মোমেন এ বিষয়ে বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডিমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনে প্রস্তাব করেছিলাম। যদিও পররাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাব ছিল নিউ ইয়র্কস্থ জাতিংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ মুহিতকে প্রধান করার। তদন্ত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন মিশনের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার চুরির তথ্য পাই। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পে মিলিয়ন ডলার দুর্নীতির তথ্য আসে। বিদায়ের আগে অনেক কাজ হলো কিন্তু দুর্ভাগ্য, চুরির তদন্তটি শুরু করে আসতে পারিনি। তিনি বলেন, আউটসাইডার হলেও এডমিরাল খুরশেদ আলম পররাষ্ট্রে বহু জটিল তদন্ত করেছেন এবং এসব কাজে তিনি দক্ষ। ড. মোমেন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই তদন্ত বেশিদূর অগ্রসর হবে না।