দুর্নীতির অভিযোগ : বাংলাদেশে দেওয়া ফান্ড খতিয়ে দেখার দাবি অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে
দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশে দেওয়া ফান্ড খতিয়ে দেখার দাবি জানানো হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে। আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) পার্লামেন্টে উত্থাপিত নোটিশ অফ মোশনে (জেনারেল নোটিশ - বাংলাদেশ ফান্ডিং একাউন্টেবিলিটি) দেশটির গ্রিনস দলের এমপি অ্যাবিগেল সেলিনা বয়েড এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। কর্মকর্তাদেরও দুর্নীতিমূলক অনেক ঘটনা রয়েছে। দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানে জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিষেজ্ঞার বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন বক্তব্যে।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশের নির্বাচনে কারচুপি, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির কথা উল্লেখ করেন তার বক্তব্যে। একই সঙ্গে অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অ্যাবিগেল বয়েডের কার্যালয়ের পলিসি এন্ড পার্লামেন্টারি এডভাইজার পেরিজ কামু প্রেরিত ভিডিওতে তিনি বলেন..
১. এই সংসদ যেনো আমলে নেয়:
ক. পাবলিক প্রসেসে হস্তক্ষেপ করা, অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে নিজ ভাইকে সহায়তা করা এবং সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণসহ উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানে জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত ২০ মে 'পাবলিক ডেজিগনেশন' ঘোষণা করে।
খ. বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের অনেক ঘটনা রয়েছে। দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের সরকারি পরিষেবাগুলোতে ব্যাপকভাবে ঘুষ এবং দুর্নীতি চলছে।
গ. দুর্নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুন্ন করেছে।
ঘ. বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে ক্ষুন্ন করেছে-
(এ) নির্বাচনে কারচুপি করে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের ৮,০০০ জনেরও বেশি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কিংবা সহিংসভাবে নীরব করে দিয়ে,
(বি) নিজ নাগরিকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি, নজরদারি, চাঁদাবাজি এবং নির্যাতনের শিকার করে এবং
(সি) ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষকে গুম করে যাদের মধ্যে ১০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
২. এই সংসদ যেনো আমলে নেয় যে:
ক. অস্ট্রেলিয়া সরকার ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশকে উন্নয়নমূলক সহায়তা হিসেবে ১১৬.২ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতক স্তরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সমর্থন করে।
খ. এই অর্থ এবং সহায়তা কীভাবে বিতরণ করা হয় সে সম্পর্কে সতর্ক নজরদারি না করে অস্ট্রেলিয়া দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের পকেটে অর্থ তুলে দেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যারা কিনা মানবাধিকার লঙ্ঘনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এবং গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করেছে।
৩. এই সংসদ যেনো আরও আমলে নেয়:
ক. সরকারি পরিষেবাগুলোকে আরও স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী করার জন্য বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে, ব্যবসায়িক এবং নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নতি করতে এবং অর্থপাচার ও অন্যান্য আর্থিক অপরাধের তদন্ত ও বিচারে সক্ষমতা তৈরি করতে,
খ. অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় এবং
গ. অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে অবিলম্বে বাংলাদেশে নিজ ফান্ডিং ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার আহ্বান জানাতে; সেই সাথে অস্ট্রেলিয়ান ফান্ড বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা করার জন্যই এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকাবার জন্য সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে না - তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের আরও ব্যাপকভাবে স্ক্রিনিং করার মাধ্যমে।