Logo
Logo
×

সংবাদ

এমপিকে তুলে নিয়ে টিভির শেয়ার কেড়ে নেন বেনজীর ও নাফিজ

Icon

বাংলা আউটলুক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১২:৪৬ এএম

এমপিকে তুলে নিয়ে টিভির শেয়ার কেড়ে নেন বেনজীর ও নাফিজ

বেনজীর আহমেদ ও নাফিজ সরাফাত। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার লিখে নেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। রাত ১টার দিকে সরাফাত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান শফিকুর রহমানকে বাসা থেকে বেনজীরের কাছে নিয়ে যান। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক সমকালে শুক্রবার (৩১ মে) শফিকুর রহমানের বরাতে এমনই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, শফিকুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বেনজীর ও সরাফাতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুর রহমান ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ মেয়াদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। চাঁদপুর-৪ আসন থেকে টানা দুইবারের  সংসদ সদস্য। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তার স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সিটিজেন টিভি সরকারের অনুমোদন পায়। তবে এখনও এ টেলিভিশন সম্প্রচারে আসেনি।

লিখিত বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান (মালিক)। প্রথমদিকে আমার কোনো শেয়ারহোল্ডার ছিল না। একা অনএয়ারে আসার মতো টাকাও আমার ছিল না। আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় রুট গ্রুপের মালিক রাজ্জাকুল হোসেন টুটুল অনুরোধ করেন, তাঁকে সঙ্গে নিলে অনএয়ারে আসার জন্য বাড়ি ভাড়া, অফিস স্টাফসহ ৩০-৪০ লাখ টাকা যা খরচ হয়, তিনি করবেন। আমি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হই এবং তাঁকে সঙ্গে নিই। তবে আজকাল করে বছর চলে যায়। এরই মধ্যে সরকারের অন্যান্য যা অনুমোদন দরকার তা করে ফেলি।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এক রাতে সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত নামে এক যুবক (আগে চিনতাম না) আমার বনানীর বাড়িতে আসেন। সিটিজেন টিভি স্পোর্টস দিয়ে শুরুর কথা বলে আমাক তুলে নিয়ে ওয়েস্টিন হোটেলের নিচতলায় বেনজীরের কাছে নিয়ে যান। বেনজীর, নাফিজ সরাফাত, টুটুল ছাড়াও অচেনা চেহারার আরও দু’জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যাদের দেখে মনে হলো সশস্ত্র। বেনজীর একটা হলুদ কাগজ আমার হাতে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি কাগজের লেখা পড়তে শুরু করলে বেনজীর বাধা দিয়ে বলেন, সিটিজেন টিভি হবে স্পোর্টস ওরিয়েন্টেড। অচেনা দু’জনকে দেখিয়ে বলেনু স্পোর্টসের লোক। তাদের সঙ্গে একটু চুক্তিতে আসতে হবে। এই কাগজ সেই চুক্তিপত্র। এক পর্যায়ে তারা ধমকের সুরে কথা বলেন। রাত ২টার দিকে আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হই।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘টেলিভিশন চালুর বিষয়ে টুটুলকে বারবার তাগাদা দিলে তিনি বলেন, বেনজীর এবং নাফিজ সব করবেন। তাঁর কাছে কিছু নেই। তখন আমি আরজেএসসিতে গিয়ে সিটিজেন টিভি এভাবে পাই যে, আমার নামে ৩০ শতাংশ শেয়ার, বেনজীরের দুই মেয়ের নামে ১৫ শতাংশ করে ৩০ শতাংশ, নাফিজ সরাফাতের নামে ২৫ শতাংশ এবং টুটুলের নামে ১৫ শতাংশ। এ অবস্থায় ৪ থেকে ৫ বছর চলে গেছে। আমি কিছু করতে পারছি না। ওরাও আইন অনুযায়ী আমাকে বাদ দিয়ে চালু করতে পারেননি। তাগাদা দিলে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বেশ কিছু শর্তে ২০১৭ সালের এপ্রিলে সরকারের অনুমোদন পায় সিটিজেন টিভি। ওই সময় র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। সরকারি অনুমোদনের ৭ বছর পার হলেও এখনও সম্প্রচারে আসেনি সিটিজেন টিভি। তবে এই টেলিভিশন চ্যানেলের নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে ২০২১ সালে একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে এই চ্যানেলের রেজিস্ট্রেশন দেখানো হয় ২০১৭-২০১৮ সাল। সেখানে টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে শফিকুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও বেনজীরের ঘনিষ্ঠ চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। আর পরিচালক হিসেবে নাম রয়েছে বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর। সিটিজেন টিভি অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিলু এক বছরের মধ্যে সম্প্রচারে আসতে হবে। পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার আগে এবং পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার পর দুই বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না।

জানতে চাইলে শফিকুর রহমান টেলিফোনে বলেন, ‘যে কাগজে সই করেছি, সেটি যে শেয়ার হস্তান্তরের কাগজ তা আমাকে বলা হয়নি। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে লিখে নেওয়া হয়।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে মাস্তানি করেছে।’ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাগজে টুটুলের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, যতটুকু জানি, টুটুলের শেয়ারও তারা নিয়ে নিয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বেনজীর আহমেদকে টেলিফোন করে পাওয়া যায়নি। গত ৪ মে থেকে সপরিবারে দেশের বাইরে রয়েছেন বেনজীর। একটি সূত্রের বরাতে বলা হয়, দেশ থেকে সপরিবারে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। সেখান থেকে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর রয়েছেন। বক্তব্যের জন্য চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন