ফরিদপুরের ভাঙা থেকে গত পাঁচ দিন আগে ঢাকায় এসেছেন সরোয়ার শরীফ। রাজধানীর ফকিরাপুল কালভার্ট রোডের একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তার বিমান টিকেট হয়নি। এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা চেষ্টা করছে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
সরোয়ারের মতো এমন অসংখ্য অভিবাসন প্রত্যাশীর দেখা মিলছে রাজধানীর পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল ও বিজয়নগরের অলিতে-গলিতে। তাদের চোখে মুখে বিরক্তি, ক্লান্তি ও হতাশার ছাপ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারের নিচে কথা হয় কিশোরগঞ্চের ইটনার আমীর হামজার সঙ্গে। তিনি জানান, ৬৯ হাজার টাকার পেপারে সই করে এই পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়েছেন দালালকে। তারপরও বিদেশ যাওয়া অনিশ্চিত। এজেন্সীর লোকগুলো আমাদের রাস্তায় বসিয়ে রেখেছে। এখন দেয়, তখন দেয় বলে টিকেটই দিচ্ছে না।
কুমিল্লার জাহিদুল বললেন, শুক্রবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১২ টা পর্যন্ত কলিং ভিসার যাত্রীদের বহনকারী বিমানগুলো কুয়ালালামপুরে অবতরণ করতে পারবে। সে হিসেবে যাত্রীদের হাতে রয়েছে আর ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে টিকেট হাতে পেলেও আর মালয়েশিয়া যাওয়া সম্ভব নয়। তাই অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
বাংলা আউটলুককে তিনি বলেন, এজেন্সির সিন্ডিকেটের কাছে আমরা অসহায়। সরকারি ভাবে বিদেশের কথা বলা হলেও আমাদের কাছ থেকে ৫ লাখের ওপরে টাকা নেয় এজেন্সীর দালালরা। তারপরও হয়রানি, অনিশ্চয়তা। দেশের যে অবস্থা তাতে দেশেও কিছু করার নাই। আবার টাকা খরচ করে বিদেশ যাব তাতেও দুর্ভোগ। আমাদের শান্তি আসলে কোথাও নাই।
এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে ‘সিন্ডিকেট’ করা বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর ‘ভিসা হ্যান্ডলিং’ কার্যক্রম বন্ধ করতে কলিং ভিসা চালু করে। সে সময় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বিন ইসমাইল জানান, দেশটির সরকার অনুমোদিত যেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এতদিন সেদেশে কর্মী পাঠাতে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতো তাদের বদলে এখন থেকে নিয়োগকর্তাই সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর ইমিগ্রেশন বিভাগের মাইভিসা পোর্টালে ই-ভিসার জন্য নিয়োগকর্তারা সরাসরি আবেদন করতে পারবেন।
দেশটির এমন সিদ্ধান্তের বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসার আবেদন করে হাজার হাজার যাত্রী। তবে শুক্রবার শেষ দিন হলেও দুপুর ২ টা নাগাদ অনেক এজেন্সী তাদের যাত্রীদের বিমান টিকেট দিতে পারেনি।
যাত্রীদের এই বাড়তি চাপ সামলাতে পরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। শুক্রবার (৩১ মে) সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি বিমানের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল মাসুদ খানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।