এমপি আনার হত্যা: লাশের খণ্ডিত অংশ না পাওয়ায় বাড়ছে জটিলতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০৪:১৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার প্রায় সপ্তাহ পার হলেও এখনো শরীরের খণ্ডাংশগুলোর কোনো হদিস মেলেনি। কলকাতা ও ঢাকার গোয়েন্দা তৎপরতায় খুনের বিষয়টি পরিষ্কার হলেও লাশের খোঁজ না মেলায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে তার নির্বাচনী আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
এদিকে, রোব ও সোমবার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার স্থান কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটটি পরিদর্শন করেছে ঢাকার ডিবি টিম। এ সময় সেই ফ্ল্যাটে মুখ বেঁধে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদারকে (২৪)। সেখানে বসেই বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ৩ জনকে ভিডিও কলে যুক্ত করে জিহাদের সঙ্গে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে ডিবি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জিহাদের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ও তার ভাতিজা তানভীর ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছে। এ সময় ঢাকার ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ এবং কলকাতার তদন্ত দলের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ভিডিও কলে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে হত্যাকারীরা ফ্ল্যাটের কোথায়, কীভাবে এমপি আনারকে হত্যা করা হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেছে। এছাড়া আনারের দেহ কীভাবে খণ্ডবিখণ্ড করা হয়, কীভাবে বাইরে নেওয়া হয়, রক্তাক্ত কাপড়, ব্যাগ ও স্যুটকেসে কীভাবে খণ্ডিত অংশগুলো ঢুকানো হয় সেই বর্ণনাও তারা দিয়েছে বলে ডিবি জানায়। যৌথ এই বর্ণনার সঙ্গে পূর্বে পৃথক পৃথকভাবে দেওয়া খুনের বর্ণনায় মিল রয়েছে বলে ডিবি সূত্র প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুরিশের প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভারতীয় পুলিশের উপস্থিতিতে কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাট আমরা পরিদর্শন করেছি। এটি একটি আলিশান বাড়ি। এই বাড়িতেই সংসদ সদস্য আনার জীবিত অবস্থায় প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু তাকে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে অত্যন্ত বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর এমপি আনারের দেহ কীভাবে খণ্ডবিখণ্ড করা হয় তার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় জিহাদ। এসময় ডিবির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জিহাদকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জিহাদকে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে সে সবকিছু স্বীকার করে।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, এই ফ্ল্যাটে ঢোকার পরই আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি, কীভাবে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল। সংসদ সদস্য আনার হত্যার পর আনন্দ উল্লাস করা হয়েছিল বলেও আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি আরও জনান, আমরা কলকাতা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তাদের কাছে থাকা আসামি জিহাদকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাট পরিদর্শন করেছি। জিহাদের কথামতো আমরা কিন্তু ডাম্পিং এলাকা পরিদর্শন করেছি, যেখানে সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের বিভিন্ন দেহাংশ ফেলা হয়েছে। আমরা দুই দেশে গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য মেলানোর চেষ্টা করছি। আমরা অনেক তথ্যই পাচ্ছি। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে। কলকাতা পুলিশ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।
এর আগে ঢাকায় হওয়া অপহরণ মামলার তদন্ত ও মরদেহ উদ্ধারে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল রোববার (২৬ মে) সকালে কলকাতায় যায়। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান।
সোমবার (২৭ মে) রাত পর্যন্ত এমপি আনারের টুকরো টুকরো করা দেহের কোনো অংশই উদ্ধার হয়নি। খুনে ব্যবহার করা চাপাতিসহ অন্য ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি। আলামত উদ্ধারে কলকাতা পুলিশ ময়লার ভাগাড়, খাল ও ডোবায় গত কয়েকদিন ধরেই তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, এমপি আনারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো আলামত না পাওয়ায় এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে অফিসিয়ালি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। ফলে তার নির্বাচনী এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনটি শূন্য করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংসদ সচিবালয়।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি বলেছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীমের নির্বাচনী আসন ঝিনাইদহ-৪ নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমাদের সংসদের তৃতীয় অধিবেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, এটি একটি নতুন ও ভিন্নধর্মী ঘটনা। অতীতে এ ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে নেই। তাই এ জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের আগেই সুরাহা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান এমপি আনার। ১৩ মে বন্ধু গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর তিনি এসএমএসে বলেছিলেন দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন। পরে ১৮ মে কলকাতায় নিখোঁজের একটি জিডি করা হয়। ২২ মে ভারতের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে জানায় কলকাতার সিআইডি।