Logo
Logo
×

সংবাদ

দেশে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা

Icon

নাজমুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ০১:০৯ এএম

দেশে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আর দুর্ঘটনায় পড়ে আহতের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাপকভিত্তিক চাহিদায় সংশ্লিষ্ট এ ব্যবসার দ্রুত প্রসার হচ্ছে।    

যদিও উন্নত মানের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য এখনো আমদানির উপরই নির্ভর করতে হয়। তবে স্থানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো মানের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে এবং সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। 

রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনের (নিটোর) আশপাশ এলাকায় কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিষেবার একটি জমজমাট হাব গড়ে উঠেছে। এখানে ১০টিরও বেশি বেসরকারি সেন্টারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া অর্থোপেডিক বেল্ট, সার্ভিকাল কলার এবং ওয়াকারের মতো অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন সামগ্রীও এখানে পাওয়া যায়।

বেসরকারি এই পরিষেবা খাতের নেতৃত্বে রয়েছে ব্র্যাক। প্রতিষ্ঠানটির লিম্ব অ্যান্ড ব্রেস ফিটিং সেন্টার ২০০৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮০ ‘র বেশি মানুষের শরীরে কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করেছে। 

সেন্টারটির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো শাহিনুল হক রিপন বলেন, বাংলাদেশে কৃত্রিম অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের বাজার কত বড় তা নিয়ে পর্যাপ্ত সমীক্ষা নেই। 

তিনি বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে স্থানীয়ভাবে অনেক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তৈ‌রি হয়েছে। 

বেসরকারি অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডায়নামিক লিম্ব সেন্টার একটি। এই প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক প্রোপ্রিও ফুট এবং সি-ওয়াক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জয়েন্টসহ প্লাস্টিকের মানসম্মত অনেক ধরনের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ  পাওয়া যায়।  

কোম্পানিটির বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের পরিচালক আবু সাঈদ জানান, তাদের নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা মাসে প্রায় ৮০০টি বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (লিম্ব ও ব্রেসসহ অন্যান্য) উৎপাদন করেন। 

তিনি বাংলা আউটলুককে বলেন, 'একটি নির্দিষ্ট গতিতে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা বাড়ছে। প্রতিমাসে আমাদের প্রায় ৪০০-৫০০ পিস কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি হচ্ছে।'

জানা যায়, তারা যেসব পণ্য বিক্রি করেন তার উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেরাই তৈরি করতে পারেন। তবে খুব উন্নত মানের যেমন প্রোপ্রিও ফুট এবং সি-ওয়াক তারা জার্মানি থেকে আমদানি করেন। উচ্চ মূল্য পরিশোধের সামর্থ্য আছে এমন ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো তাদের কাছে বিক্রি করেন। তবে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী তাদের কাছে ৬০০ থেকে ৪ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য রয়েছে। 

সাঈদ জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত কৃত্রিম অঙ্গ প্রস্তুতকারক, প্রস্থেটিস্ট এবং অর্থোটিস্টদের একটি দলের কারণে ডায়নামিক লিম্ব সেন্টার অন্যদের চেয়ে আলাদা।

বাংলাদেশে এই ধরনের পেশার লোকের অভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষেরই এই পর্যায়ের দক্ষতা আছে। 

দ্য সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডও (সিআরপি) এই খাতে দক্ষতা সম্পন্ন মানুষের অভাবের বিষয়টি স্বীকার করেছে। সংস্থাটি বলছে, দেশে মাত্র ২৫ জন চিকিৎসকের স্প্লিন্টস, ব্রেসসহ কৃত্রিম অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ নিয়ে কাজ করার আন্তর্জাতিক সার্টিফিঢকেট আছে। অতীতে এই ধরনের কাজ করতে চাইলে ভারত বা ভিয়েতনামের মতো দেশে প্রশিক্ষণ নিতে হতো। তবে বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৪ সালে সিআরপি এই ফিল্ডের চিকিৎসকদের জন্য ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। 

আন্তর্জাতিক কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের সহায়তায় তিন বছর মেয়াদী এই প্রোগ্রামে প্রথমবার ১০ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। পড়াশোনা শেষে সিআরপিতে সম্ভাব্য চাকরির সুযোগ এবং সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পান এই শিক্ষার্থীরা। প্রথম ব্যাচ সফলভাবে কোর্স শেষ করায় চলতি বছর আরও ১০ শিক্ষার্থীকে নতুন করে ভর্তি করা হয়েছে। 

সিআরপির প্রস্থেটিকস এবং অর্থোটিক্স বিভাগের প্রধান সোহানুর রহমান জানান, গত বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের দুটি ক্লিনিক প্রায় ৮২০ জন রোগীর শরীরে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করেছে। 

সিআরপির প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, দুই ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর ৯০ শতাংশকেই হয় বিনামূল্যে, না হয় ছাড়মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

সোহানুর রহমানও কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্রমবর্ধমান চাহিদার এবং আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের ক্রমশ প্রতিযোগিতা বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। 

এদিকে, নিটোর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কাভি কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য দেশে অহরহ ঘটা সড়ক দুর্ঘটনাকে দায়ী করেছেন। যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে অধিকাংশ কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভারত, জার্মানি, চীন ও কোরিয়ার মতো দেশ থেকে আমদানি করা হয়। 

অধ্যাপক ড. ইকবাল বলেন, এই আমদানিই প্রমাণ করে যে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের বাজার আরও প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও আত্ম-নির্ভরশীলতায় অবদান রাখবে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন