Logo
Logo
×

সংবাদ

ডয়চে ভেলের অনুসন্ধান

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী র‌্যাব সদস্যরা যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী

Icon

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০৪:৪০ এএম

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী র‌্যাব সদস্যরা যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী

ছবি: ডয়েচে ভেলে

যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড আছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) গোয়েন্দা শাখার এমন কিছু সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা হয়েছিল বলে জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের একটি তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।

'মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী' শিরোনামে ২০ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রে আরও দেখানো হয়েছে, কীভাবে শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়েছিল।

তথ্যচিত্রটিতে শান্তিরক্ষীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, এই ধরনের মোতায়েন শান্তিরক্ষা মিশনের মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েন আছে বলেও তথ্যচিত্রটিতে বলা হয়।

তথ্যচিত্রটিতে উঠে এসেছে, শতাধিক র‍্যাব সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনকে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাঠানো হয়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী। ছবি: ডয়েচে ভেলে

শুধু তাই নয়, তথ্যচিত্রটিতে শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা র‍্যাবের তিন সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়। এই তিন জন র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন, তাদের মধ্যে দুজন র‍্যাবের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গোয়েন্দা শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলা হয়, ‘র‍্যাবের এই ইউনিটটি বাংলাদেশ জুড়ে টর্চার সেলের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এসব সেলের কিছু সেফ হাউস রয়েছে, অন্যগুলো র‍্যাব কম্পাউন্ডের আড়ালে রয়েছে।’

ডয়েচে ভেলে জানায়, এসব সত্ত্বেও তাদেরকে ঝুঁকিতে থাকা বিভিন্ন বেসামরিক সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল।

তথ্যচিত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড্রু গিলমোর বলেন, 'জাতিসংঘের হাত দৃশ্যত বাঁধা' ।

তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, 'তখন অধিকাংশ শান্তিরক্ষী সুইডেন এবং আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে আসত।'

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে স্নায়ুযুদ্ধের যখন সমাপ্তি ঘটছে, তখন মিশনগুলোর ভয়াবহতা দেখে পশ্চিমা সরকার শান্তিরক্ষা কর্মকাণ্ড থেকে ক্রমশ সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করে। তার বদলে তারা অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয় প্রাধান্য দেয়।

জাতিসংঘে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশের একজন রাজনৈতিক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানান, গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সেনাদের রক্তক্ষয় কতটা সহ্য করা যাবে তা বিবেচনায় আনতে হয়।

অ্যান্ড্রু গিলমোর ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি জাতিসংঘের মিশনে পাঠানো সেনাদের মরদেহ ফিরতে শুরু করে, তখন সেই সরকারগুলোকে সংসদীয় তদন্তের মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটি কোনো সমস্যা নয়। ফলাফল, জাতিসংঘে খুব, খুব কম উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পশ্চিমা আদর্শের সেনা কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, 'প্রায় কখনোই পর্যাপ্ত সেনা ছিল না। তার মানে এই নয় যে জাতিসংঘ বলতে পারে, “ঠিক আছে, আমরা এই দলটি নেব কারণ এই দেশ মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কিংবা দুঃখিত, আপনাদেরকে আমরা নিতে পারছি না।” জাতিসংঘের এটি করার সুযোগ নেই।'

গিলমোর বলেন, 'এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে আক্ষরিক অর্থেই শান্তিরক্ষীরা অনুপস্থিত থাকলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী হতে পারে। আর তখন আপনাকে সমন্বয় করতে হয় যে, হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর চেয়ে দুই তিন জন 'মন্দ লোক' পাঠানো অপেক্ষাকৃত কম খারাপ বিকল্প হতে পারে।'

ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রে উল্লেখ করা র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার তিন সদস্য। ছবি: ডয়েছে ভেলে

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তৃতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে অবদানের জন্য দেশটি বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হয়েছে।

তথ্যচিত্রে বলা হয়, ২০১২ সালে শান্তিরক্ষীদের বেশ কয়েকটি যৌন নিপীড়ন কেলেঙ্কারির পর জাতিসংঘ তার কর্মীদের জন্য নতুন মানবাধিকার নীতি ঘোষণা করে।

সেই নীতি অনুসারে শান্তিরক্ষায় সেনা পাঠানো দেশগুলো সাধারণ ফোর্স কমান্ডার এবং তাদের সহকারীদের বাদে অন্যান্য সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব পালন করে। এসব দেশকে প্রত্যেক সেনার জন্য প্রত্যয়ন দিতে হয় যে, তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি বা এমন কোনো অভিযোগও তার বিরুদ্ধে নেই৷

ডয়চে ভেলের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ লিখিতভাবে জানায়, 'প্রত্যেক ব্যক্তিকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় রিসোর্স নেই। তবে সেনা এবং পুলিশ সদস্য সরবরাহকারী দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি আছে।'

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, 'প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর, সুনির্দিষ্টভাবে র‍্যাব সদস্যদের মাধ্যমে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা দ্বিপাক্ষিকভাবে দেশটির জাতীয় কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত থেকে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।'

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন