মস্তিষ্কের ওপর বাড়তি তাপমাত্রার প্রভাব কী
ছবি সংগৃহীত
আরো পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তন মস্তিষ্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের কিছু কিছু অবস্থার অবনতি ঘটায়। নতুন একটি গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়লে স্ট্রোক, মাইগ্রেন, মেনিনজাইটিস, মৃগীরোগ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, সিজোফ্রেনিয়া, আলঝেইমার ডিজিজ ও পারকিনসন্স রোগের পরিস্থিতি খারাপ করে দিতে পারে।
ইউসিএলের নিউরোলজির অধ্যাপক সঞ্জয় সিসোদিয়া এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক মার্ক মাসলিনের গবেষণার বরাতে এই সংবাদ দিয়েছে দ্য কনভারসেশন।
আমরা যেসব পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তাকে আমাদের মস্তিষ্ক। বিশেষ করে উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা। যেমন আমরা যখন অতিরিক্ত ঘামতে থাকি তখন আমাদেরকে সূর্যের আলো থেকে দূরে ছায়ায় যেতে বলা হয়।
আমাদের মস্তিষ্কের কোটি কোটি নিউরনের প্রতিটিতে অনেকটা শেখা এবং মানিয়ে নেওয়া কম্পিউটারের মতো। যেগুলোতে ইলেক্ট্রিক্যালি সক্রিয় উপাদান রয়েছে। এই উপদানগুলোর অনেকগুলো তাপমাত্রার তারতম্যের ভিন্নতার ওপর ভিন্নভাবে কাজ করে এবং খুব সংকীর্ণ পরিসরের তাপমাত্রায়ও একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আমাদের শরীর এবং তার সব উপদান এই সীমার মধ্যেই ভালো ভাবে কাজ করে। আর তা আমরা হাজার হাজার বছর ধরে মানিয়ে নিয়েছি।
মানুষের বিবর্তন আফ্রিকায়। তারা সাধারণত ২০ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ আর্দ্রতার মধ্যে আরাম বোধ করে। তাই মস্তিষ্কের অনেক উপাদানই আসলে তাদের তাপমাত্রার শীর্ষ সীমারে কাছাকাছি কাজ করছে। তাই তাপমাত্রা বা আর্দ্রতার সামান্য বৃদ্ধির অর্থ হতে পারে তারা আর একসঙ্গে ভালোভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
যখন পরিবেশগত এই অবস্থাগুলি দ্রুত পরিচিত পরিসরের বাইরে চলে যায়, যেমনটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দেখা যাচ্ছে, তখন আমাদের মস্তিষ্ক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে লড়াই করে এবং সুচারুরূপে কাজে ভুল হতে শুরু করে।
হয়তো কিছু রোগের কারণে ইতোমধ্যেই ঘাম হতে পারে। ফলে ঠান্ডা থাকতে হয় অথবা খুব গরসের বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হয়। স্নায়বিক এবং মানসিক অবস্থার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ শরীরের প্রতিক্রিয়া ক্ষমতার কমিয়ে ফেলে এবং সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলে।
সুতরাং, এটা স্পষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে অনেককে বিভিন্ন ভাবে স্নায়বিক রোগ আক্রান্ত করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ডিমেনশিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা আরও সাধারণ ব্যাপার। তাপমাত্রা বাড়লে মৃগী রোগের খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের অবনতি ঘটতে পারে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে উপসর্গগুলি আরও খারাপ হতে পারে, স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যায় এবং স্ট্রোক-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। তাপমাত্রা বাড়লে সাধারণ ও গুরুতর মানসিক অবস্থা যেমন সিজোফ্রেনিয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় এবং হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়ে যায়।
২০০৩ সালের ইউরোপীয় তাপপ্রবাহে, অতিরিক্ত মারা যাওয়া প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের স্নায়বিক সমস্যা ছিল।