Logo
Logo
×

সংবাদ

আসছে ‘গুরুত্বপূর্ণ খরচের’ বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পিএম

আসছে ‘গুরুত্বপূর্ণ খরচের’ বাজেট

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখাতে আসছে  দেশের আগামী অর্থবছরের বাজেট।  বাজেট হবে খুব সতর্কতার সঙ্গে খরচ করার বাজেট এবার বাজেটে বড় ধরনের  কোনো খরচ হবে না বাজেটকে গুরুত্বপূর্ণ খরচের বাজেট বলা যাবে আগামী বাজেট সম্পর্কে অর্থবিভাগের বাজেট-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকতা এমন কথা বলেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, আজ সোমবার (১৩ মে)  প্রধানমন্ত্রীকে অর্থবিভাগ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয়।আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধারণা উপস্থাপন করবে। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে পৃথক বৈঠকে অর্থবিভাগ এনবিআরকে আগামী বাজেট বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন। আর ১৬ মে পরিকল্পনা কমিশনে আগামী বছরের এডিপি অনুমোদন হবে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি সামষ্টিক অর্থনীতি গত তিন বছর ধরে বেসামাল অবস্থায় আছে এখন আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুসারে আগামী বাজেটে এই বেসামাল অবস্থা থেকে অর্থনীতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আগামী বছর বাজেটের আকার হবে লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই অর্থ পাচার কমিয়ে আনতে হবে। বেশি অর্থ পাচার হয় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আগামী বাজেটে রাজনৈতিক বিবেচনায় অর্থ পাচার বন্ধ করার উপায় রাখতে হবে। অর্থ পাচার হওয়ার উৎসগুলো হচ্ছে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং, রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনা এবং হুন্ডি পদ্ধতিতে ব্যাংকঋণ বিদেশে পাচার। এই চারটি প্রধান প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে প্রতিবছর ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সংখ্যায় এসব পাচারকারী কয়েক হাজারের বেশি হবে না। দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা, প্রকৌশলী, পোশাক কারখানার মালিক, বিত্তবান ব্যবসায়ী কিংবা মার্জিনখোর রাজনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশের সমাজের উচ্চমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তশালী এলিটঅংশে তাদের অবস্থান। তারা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমকে অপব্যবহার করে ব্যাংকঋণ নিয়ে তা বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে চলেছে। তারা ব্যাংকগুলোরইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিহিসেবে লুটপাটকারীর ভূমিকা পালন করছে। তারা রাজনীতিক পরিচয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মার্চে গড় মূল্যস্ফীতি দশমিক ৮১ শতাংশ। যার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দশমিক ৮৭ শতাংশ। কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী  আবুল হাসান মাহমুদ আলী মূল্যস্ফীতি কমিয়ে নিয়ে আসার কথা দিয়েছেন। তার কথা অনুসারে জুনের মধ্যে শতাংশে নামিয়ে আনা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সহায়তার  শর্ত অনুসারে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে  ডলারের দাম বৃদ্ধি করে নতুন করে বিপাকে পড়েছে সরকার বিদেশি ঋণ নেওয়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।  বিশেষ করে যাদের ডলারে আয় নেই, তাদের লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হতে পারে। সিমেন্ট, ইস্পাতসহ বেশ কিছু খাত রয়েছে, যেগুলো মূলত স্থানীয় বাজারনির্ভর। এসব কোম্পানিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও অন্তত সাড়ে শতাংশ হারে লোকসান গুনতে হবে। এর মধ্যে সরকারি অনেক কোম্পানিও রয়েছে।

অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের তথ্য অনুসারে ,২০২৩ সাল শেষে সরকার বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ১১ লাখ হাজার ৪০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) এখন ডলারের দাম টাকা বাড়ায় টাকার অঙ্কে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা; অর্থাৎ এক দিনেই টাকার হিসাবে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭০ হাজার ৪৪৮ কোটি।

মোট বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি খাতে ৭৯ শতাংশ আর বেসরকারি খাতে ২১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল হাজার ৯৬৯ কোটি ডলার। অন্যদিকে গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় হাজার ৯৫ কোটি ডলার।

ছাড়া সুদহার বাজারভিত্তিক হওয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ শতাংশ হারে ঋণ নিতে পারত। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণের সুদের হার ১৩ থেকে ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে সুদহার এক বছরের ব্যবধানে ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। আগামীতে এই সুদের হার ২০ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ।

এদিকে ডলার-সংকটে আমদানি কমে আসায় শুল্ক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় সংকুচিত হয়েছে।  অবস্থা আরো খারাপ হবে, কারণ ডলারের দাম বৃদ্ধি। তাই আয়কর খাত থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর। যার প্রতিফলন ঘটবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।

আসছে জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।  আইএমএফের  ঋণের শর্ত অনুসারে জুন মাসের মধ্যে জিডিপি দশমিক ০৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। এই বাজেটে শুধু আয়কর থেকেই অন্তত ৩৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করছে এনবিআর।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে কাটছাঁট করে তা লাখ ১০ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। আসছে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণের কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে আয়কর থেকেই ৩৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করতে চায় এনবিআর। আইএমএফ ঋণের শর্ত অনুসারে আগামী জুন মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দিয়েছে লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছর উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত কর-রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে এনবিআর কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ের মতো সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করহারে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবছে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন