Logo
Logo
×

সংবাদ

সবচেয়ে কম ভোট পড়ার রেকর্ড

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৬:১৫ এএম

সবচেয়ে কম ভোট পড়ার রেকর্ড

বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের এই হার গত ৫টি উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়ে ৪১ শতাংশের বেশি। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৫ সালের প্রথম উপজেলা নির্বাচনের ভোটের হারের সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ওই নির্বাচন দুটিতে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণে হিসেবে সিইসি বলেছেন, সকালে বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুম চলছে। এ কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ধান কাটার মৌসুমে এবারই প্রথম ভোট হচ্ছে না। আগে এই মৌসুমেও ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি থাকতো। মূলত নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপরে মানুষের আস্থা নেই। ভোট দিতে পারলেও তা গণনা করা হবে কিনা ভোটারদের মনে এমন সন্দেহ রয়েছে। এজন্য ভোটার উপস্থিতি কমেছে।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। চলে বেলা ৪টা পর্যন্ত। এই দফায় ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে স্থগিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জেতায় ভোট হয়েছে ১৩৯ উপজেলায়।

সরেজমিনে ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি অনেক কম। অধিকাংশ কেন্দ্রে ছিল না লাইন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দামুড়হুদায় ভোটারদের তেমন কোনো লাইন চোখে পড়েনি। দামুড়হুদায় ভোট পড়েছে ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর জীবননগরে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

যশোরের কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ৭১ জন ভোট দিয়েছিল। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৪৯৪ জন। ঝিনাইদহ সদরের বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ভোটারের সারি না থাকায় কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অলস সময় কাটাচ্ছির। সকাল ৯টায় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ৮৪১ ভোটের বিপরীতে ৩৫ জন ভোট দিয়েছিল। একই বিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫০ ভোটারের কেউই ওই সময়ের মধ্যে ভোট দেননি।

বগুড়ার গাবতলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি সকাল থেকেই প্রায় ফাঁকা ছিল, বিভিন্ন কক্ষে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মকর্তাদের। ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮৮৭টি ভোটের মধ্যে বেলা দুইটা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭১৪। শতকরা হিসেবে যা ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। 

ময়মনসিংহেও ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। বেলা দেড়টা পর্যন্ত হালুয়াঘাট উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৪ শতাংশ, ফুলপুর উপজেলায় ১৮ শতাংশ ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ১৪ শতাংশ এবং জীবননগরে ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৭ শতাংশ।

এদিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় ডিমলা উপজেলায় এক এজেন্টকে কেন্দ্রের মধ্যেই ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘুমিয়ে পড়া ওই এজেন্ট বলেন, সকাল ৮টায় কেন্দ্রে আসছি। কখনো কখনো দুই তিনজন আবার কখনো কখনো ২০ মিনিটেও কোনো ভোটারের উপস্থিতি নেই। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারছি না। এছাড়া কোথাও রান্নার আয়োজনে সময় কেটেছে আনসার সদস্যদের। 

গাজীপুরের কালীগঞ্জে দুপুরে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নারী ও পুরুষ আনসার সদস্যদেরকে রান্নার আয়োজন করতে দেখা গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভোটকেন্দ্র ফাঁকা থাকায় পরিদর্শনে এসে বাইরে থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গাবতলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রায় অর্ধশত মানুষের জটলা দেখা গেলেও কেন্দ্রের ভেতর ছিল ফাঁকা। কেন্দ্রের ১০টি ভোটকক্ষে কোনো ভোটার চোখে পড়েনি। অলস সময় পার করছিলেন ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এমন সময় কেন্দ্রে গাড়িবহর নিয়ে পরিদর্শনে আসেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানসহ কর্মকর্তারা। পরে কেন্দ্রের ভেতরে পরিদর্শন না করেই তারা ফিরে যান। 

ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কারণ কী জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। ভোট দিলেও তা গণনা করা হবে কিনা ভোটারদের মনে এমন সন্দেহ রয়েছে। এজন্য ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। 

তবে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। নির্বাচন শেষে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নিন্দুকেরা বিশেষ করে বিরোধী দল যে বক্তব্য রেখেছে তা হাস্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা ছিল ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন  খুনোখুনি, মারামারি, রক্তারক্তি অবস্থায় সমাপ্ত হবে। এই নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে কোথাও ক্যাজুয়ালিটি নেই, প্রাণহানির ঘটনা নেই। কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিছু আহত হয়েছে, কিন্তু প্রাণহানির ঘটনা নেই। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৩০ থেকে ৪০% ভোটার উপস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করি ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক।ওবায়দুল কাদের বলেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বেশি জিতেছে। অন্য দলের হিসাবটা পরে দিতে পারবো। 

তবে বিএনপি বলেছে, নির্বাচনকে বয়কট করেছে জনগণ- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৩০ থেকে ৪০% ভোটার যদি উপস্থিত হয় যেখানে বিএনপি এবং তাদের সমমনস্ক অন্য দল নেই। তারপরও এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে এই উপস্থিতি সন্তোষজনকই বলছি। বিএনপি’র এ ধরনের বক্তব্য পাগলের প্রলাপ। 

এদিকে ভোটাররা উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোটারদের ভোটের প্রয়োজন হয় না। ফলাফল নির্ধারিত থাকে, সেটিই ঘোষিত হয়। এ কারণে ভোট নিয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই।’

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন