ভারত পেয়াঁজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৪:৪৫ এএম

ভারত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেওয়ায় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা পেয়াঁজ আমদানি করে বিক্রি করে পোষাতে পারবেন না। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করায় আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিজিএফটি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস-এমইপি) ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করায় দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেয়াঁজের দাম ৮০ টাকা হবে। এ অবস্থায় দেশীয় পেয়াঁজ আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দামের কারণে পেঁয়াজ আমদানি করলে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। কারণ ৫৫০ ডলারে পেঁয়াজ আমদানি করলে দেশের বাজারে প্রতি কেজির দাম হবে ৮০ টাকার কাছাকাছি। এটি বাজারের বর্তমান দামের চেয়ে বেশি। স্থানীয় বাজারে বর্তমান প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬০ টাকা।
এদিকে, যখন পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত, তখন বাংলাদেশে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ে। কিন্তু এখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও খুব বেশি প্রভাব নেই ভোক্তা পর্যায়ে। এর প্রধান কারণ হলো ডিজিএফটি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে এখনো পণ্যটির দাম কমেনি।
অবশ্যই পাইকারি বাজার ও গ্রামগঞ্জের মোকামে পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা কমতে দেখা গেছে সোমবার। এছাড়া রাজধানীর সবচেয়ে বড় আড়ত শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা এবং পাবনা জেলার মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আবার ফরিদপুরে প্রতি কেজিতে দাম কমেছে গড়ে ৫ টাকা।
প্রায় ছয় মাস পর গত শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিজিএফটি এক বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার এ তথ্য জানায়। তবে ডিজিএফটি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস-এমইপি) নির্ধারণ করেছে ৫৫০ ডলার।
চীন ও ভারতের পর শুধু বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশই নয়, আমদানিতেও শীর্ষে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। আর দেশে চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, ঘাটতি নয়, বরং বাড়তি উৎপাদন হচ্ছে পেঁয়াজ। এমন তথ্য খোদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। তারপরও পেঁয়াজ আমদানি না করলে সারা বছরই অস্থির থাকছে পেঁয়াজের বাজার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। আর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ। ২০১১-১২ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২০ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০২২-২৩ বছরে আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে হয়েছে ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া পেঁয়াজ উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ চার জেলা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও রাজশাহী।
অর্থাৎ, সরকারি হিসেবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি অন্তত ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু তারপরও শুধুমাত্র ভারত থেকেই চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে ৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। কাজেই, প্রশ্ন ওঠেছে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও কেন আমদানি ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।