Logo
Logo
×

অনুসন্ধান

এস আলমের ব্যাংক লুটের সহযোগী

১৩ হাজার কোটি টাকা লুটেও বহাল তবিয়তে নাবিল গ্রুপ, নেপথ্যে জামায়াতের আশকারা?

জুলকারনাইন সায়ের

জুলকারনাইন সায়ের

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬ পিএম

১৩ হাজার কোটি টাকা লুটেও বহাল তবিয়তে নাবিল গ্রুপ, নেপথ্যে জামায়াতের আশকারা?

ছবি: বাংলা আউটলুক

ব্যাংক লুটেরা হিসেবে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের আশপাশে কেউ নেই। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রুপটির লুটপাটের ঘটনা ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন। তবে ইসলামী ব্যাংক লুটে এস আলমের সহযোগী ব্যবসায়ী গ্রুপও আছে দুয়েক/একটি। তেমন একটি গ্রুপ হলো রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। 

ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার, নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানসহ নানা ছলছাতুরির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রুপটি ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লুটে নিয়েছে। যদিও এস আলমের মতো নাবিল গ্রুপের এই লুটপাটের খবর কোনো এক অজানা কারণে সংবাদমাধ্যমের পাদপ্রদীপের আলোতে আসেনি। 

অভিযোগ রয়েছে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের আস্কারায় নিজেদের বহাল তবিয়েতে রেখেছে নাবিল গ্রুপ। তার প্রমাণও পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম স্বপনের রাজনৈতিক মঞ্চে উপস্থিতির মাধ্যমে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী অঞ্চলের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চে নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান স্বপনকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লুট করেও নাবিল গ্রুপের এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর এই বাইরে থাকার নেপথ্যে কি জামায়াতের আশীর্বাদ? 

ব্যাংক লুটে এস আলমের সহযোগী নাবিল গ্রুপ 

২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ খবরটি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল। ওই সংবাদ প্রকাশের পর চট্টগ্রামের এস আলমের পাশাপাশি রাজশাহীর নাবিল গ্রুপও তখন আলোচনার শীর্ষে।

সেই সংবাদে বলা হয়েছিল—নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেড ও মার্টস বিজনেস লিমিটেডের নামে ব্যাংক থেকে যথাক্রমে ১০১১ ও ৯৮১ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ভুয়া ঠিকানা ও নামসর্বস্ব দুই প্রতিষ্ঠান খুলে এভাবে ঋণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ দুটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছিল ইসলামী ব্যাংকের গুলশান সার্কেল-২ ও ফার্মগেট শাখা। 


এছাড়াও ব্যাংকটির গুলশান শাখা ‘নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১২২৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। ব্যাংকের নথিতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা রাজশাহী দেওয়া হয়েছিল। পরে দেখা যায় সেখানে এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বরং সেখানে নাবিল গ্রুপের পাঁচতলা একটি আবাসিক ভবন ছিল।  এস আলমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ইসলামী ব্যাংক থেকে এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নাবিল গ্রুপ। 

এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে যে অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা লুটপাট করেছে, সেটা বিশ্বের ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল। তবে নাবিল গ্রুপের লুটপাটের পরিমাণও বিপুল অংকের। কিন্তু এস আলমকে নিয়ে যে পরিমাণ মিডিয়া কাভারেজ বা আলোচনা আছে, খুব বিস্ময়করভাবে নাবিল গ্রুপ নিয়ে তেমন আলোচনা নেই!

অভিযোগ রয়েছে, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, এ্যানন টেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপের নামে পত্রিকায় ঋণ কেলেঙ্কারির এত এত সংবাদ থাকলেও, নাবিল গ্রুপের কেলেঙ্কারির খবর খুব কমই পত্রিকায় এসেছে। ‌যদিও নাবিল গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির পরিমাণ উপরের বিতর্কিত গ্রুপগুলোর সম্মিলিত ঋণের পরিমাণের চেয়েও বেশি। 

নাবিল গ্রুপের লুটপাটের আংশিক চিত্র

শুধু ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকেই নাবিল গ্রুপ ভুয়া ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। ঋণ পেতে নাবিলের ব্যবহার করা ওই ভুয়া ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—আনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেস, এজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও আনোয়ারা ফিড মিলস লিমিটেড। 

এর পাশাপাশি রাজশাহীস্থ ব্যাংকের একই শাখায় নাবিলের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড মিলিয়ে মোট ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৯০০ কোটি টাকা। এই ঋণগুলো নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম স্বপনের নামে। 

ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ভিন্ন, সুবিধাভোগী নাবিল

এদিকে, ভুয়া ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক হিসেবে দেখানো হয়েছে নাবিল গ্রুপের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে। কোনটার মালিক আবার আমিনুল ইসলাম স্বপনের বাবা। অর্থাৎ কাগজে-কলমে এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বপন তার নিজের নামে রাখেননি। 

অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরির উদ্দেশ্যই ছিল অসৎ। ভিন্ন ব্যক্তির নামে মালিকানা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে নেওয়া ঋণগুলোর পুরো সুবিধাভোগী (বেনেফিশিয়ারি) স্বপন। প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই নামসর্বস্ব এবং বাস্তবে এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধুমাত্র ব্যাংকের টাকা লুটপাটের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করা হয়েছিল।

আরও অভিযোগ রয়েছে, খুবই অস্বাভাবিক এবং ব্যাংকিং নিয়মাচার লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিনিয়োগগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এই ঋণগুলোর বিপরীতে বর্তমানে খুব নূন্যতম জামানত আছে। সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে, এই  ঋণগুলো দেওয়ার পর সেই ঋণের টাকা থেকেই অল্পকিছু পরিমাণ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে সেটাই জামানত হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিছু কিছু ঋণের মেয়াদ পূর্তি হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এক টাকাও আদায় হয়নি। তাই সেগুলো পুনঃতফশিল (রি-সিডিউল) করা হয়েছে। আবার সেই রি-সিডিউলের ডাউন পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে জামানত হিসেবে রাখা সেই ফিক্সড ডিপোজিট থেকেই। 

অর্থাৎ, এখানেও বড় অনিয়ম । সুদে আসলে মিলিয়ে সেই ঋণগুলোর স্থিতি এখন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার উপরে। আর এর বিপরীতে যে জামানত দেখানো হয়েছে তা মোট ঋণ স্থিতির ১/২০ ভাগ মাত্র। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ঋণগুলোকে একেবারে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই ঋণগুলোর বিপরীতে কোনো আদায় নেই, তাই কয়েকদিনের মধ্যেই ঋণ স্থিতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কোনো নিয়ম-কানুন না মেনে বেপরোয়াভাবে নাবিল গ্রুপকে লুটপাটের ঋণ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এটা এস আলম গ্রুপের ব্যাংক লুটপাটের মতো দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে নজিরবিহীন। এতটাই নজিরবিহীন অনিয়ম হয়েছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঋণের অনুমতিপত্র (Sanction Advice) ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে।

নিজের নামে নেওয়া ঋণেও নাবিলের চেয়ার‌ম্যানের অনিয়ম

অন্যদিকে, নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম স্বপন তার নিজের নামে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যে ঋণ নিয়েছেন সেখানেও বড় ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। জামানত হিসেবে যে জমিগুলো দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশের মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি করে দেখানো হয়েছে। ‌ তার নিজের নামে করা ২৯০০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী জামানত FSV (Forced Sale Value) মাত্র ৫২৫ কোটি টাকা। 

এ ছাড়াও, ব্যাংক নিয়মবহির্ভূতভাবে নানাভাবে সহায়তা করেছে নাবিল গ্রুপকে। প্রয়োজনীয় এলসি মার্জিন না রাখা, এলসি কমিশন কম করে রাখা এবং কোভিডকালীন সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের টাকার অপব্যবহার। আর এভাবে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। মূলত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই এই হাজার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি সম্ভব হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। 

একাধিক শাখায় নাবিলের ঋণ জালিয়াতি

শুধু ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখাতেই নয়, রাজশাহী নিউমার্কেট ও পাবনা শাখাতেও ঘটেছে হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি। রাজশাহী নিউমার্কেট শাখায় ‘সুলতান এসোসিয়েটস’ নামে এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকা। এটিও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব ও কার্যক্রম নেই। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকও আমিনুল ইসলাম স্বপনের ঘনিষ্ঠজন। 

ইসলামী ব্যাংকের পাবনা শাখা থেকে ‘জামান সিন্ডিকেট’ নামে বের করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা, যার মালিক আমিনুল ইসলাম স্বপনের ভাগ্নে। সে সময় এই ঋণ নিয়ে বেসরকারি একুশে টিভিতে একটি এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট প্রচারিত হয়েছিল।

সব মিলিয়ে রাজশাহী বিভাগ থেকেই ভুয়া ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমিনুল ইসলাম স্বপন হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। ঢাকার অন্যান্য শাখা ও রাজশাহী বিভাগের শাখাগুলো মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি!

এই বেনামী ও ভুয়া ঋণগুলোর কারণে ব্যাংকটির রাজশাহী, রাজশাহী নিউমার্কেট ও পাবনা শাখায় ২০২৪ এর ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সর্বমোট ৩৩৮ কোটি টাকা! যদিও এই তিনটি শাখার সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ১২,০৭৫ কোটি টাকা।  অর্থাৎ, এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। বরং ক্ষতি আছে বিপুল। এই ক্ষতির পরিমাণ এই বছর আরও বাড়বে।

রাজশাহী অঞ্চলে নাবিল গ্রুপের এই ভুয়া ঋণগুলোর সমন্বয়, তদারকি ও করেসপনডেন্স করতেন রাজশাহী ও নিউমার্কেট শাখার দু’জন নির্বাহী। নাবিল গ্রুপের মদদে তারা এতই প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিলেন যে,  ব্যাংকের চেইন অব কমান্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের নেতৃত্বে ব্যাংকটির পুরো রাজশাহী অঞ্চলে একটি ছায়া প্রশাসন গড়ে উঠেছিল।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নাবিল গ্রুপের এই বিপুল ঋণ জালিয়াতির কথা ইসলামী ব্যাংকের প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীই জানেন। গত ৫ আগস্টের পূর্বে এই তথ্যগুলো প্রকারান্তরে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট কাউকেই এ বিষয়ে প্রতিবেদন করতে দেওয়া হতো না। 

অভিযোগ আছে, নাবিল গ্রুপকে এই ঋণের ব্যাপারে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কাউকে বাড়তি প্রমোশন দিয়ে, কাউকে ফ্ল্যাট উপহার  দিয়ে। প্রধান কার্যালয়ের এস আলম ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী নির্বাহীদের বেনামে নাবিল গ্রুপের শেয়ারহোল্ডিং পার্টনার বানানো হয়েছে। আর যারা এই লুটপাটের বিরুদ্ধে সামান্যতম মুখ খুলেছেন তাদের কাউকে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, কাউকে দূরে কোথাও বদলি করা হয়েছে। 

৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এলে নাবিল গ্রুপের এই লুটপাটের তথ্য একের পর এক বিস্তারিত প্রকাশ হতে থাকে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো—এই বিপুল পরিমাণ অনিয়ম ও জালিয়াতির পরও নাবিল গ্রুপের সঙ্গে ব্যাংকটি এখনো বহাল তবিয়তে ব্যবসা করা যাচ্ছে। গ্রুপের ঋণ নবায়ন হচ্ছে, গ্রুপের অনুকূলে একটার পর একটা এলসি খোলা হচ্ছে। এখনো এই গ্রপকে নতুন ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।

জানা গেছে, দুদকের মামলার পরও এস আলম ও নাবিল গ্রুপের অতি ঘনিষ্ঠ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও এমডি মুনিরুল মওলা এখনো পদত্যাগ করেননি। মুনিরুল মওলার ছেলে নাবিল গ্রুপের ঢাকা অফিসে মোটা বেতনে চাকরি করেন বলেও জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পর্কিত অডিট রিপোর্ট প্রকাশ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যেকটি কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন মুনিরুল মওলা। তিনি সরে দাঁড়ালে ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত আরও থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে অনেকের ধারণা। 

নাবিল গ্রুপের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা

এদিকে, নাবিল গ্রুপের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের সুসম্পর্কের রহস্যের নেপথ্য কিছুটা আন্দাজ করা যায় চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি। ওইদিন রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কর্মী সম্মেলনের মঞ্চের পেছন দিকে নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান স্বপনকে দেখা যায়। 

জামায়াতের কর্মী সম্মেলেনের মঞ্চে নাবিল গ্রুপের চেয়ার‌ম্যান স্বপ্ন (গোল চিহ্নিত)। 

প্রশ্ন উঠেছে, নাবিল গ্রুপের মতো ব্যাংকখেকো লুটেরা প্রতিষ্ঠানগুলো কি তবে দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার আসার অপেক্ষা করছে? পরে সেই রাজনৈতিক শক্তির উপর ভর করে নিজেদের সব লুটপাট ও অপকর্ম লুকিয়ে দিব্যি পার পেয়ে যাবে। আর সেই শুরুরই কি ইঙ্গিত—ভারত থেকে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দীনের দেশে ফিরে এস আলমের গাড়ি বহরে ওঠা, কিংবা জামায়াতের আমিরের রাজশাহী সফরে নাবিল গ্রুপের মার্সিডিজে ঘুরে বেড়ানো এবং গ্রুপটির চেয়ারম্যানের বাসায় আপ্যায়িত হওয়া, অথবা জামায়াতের রাজশাহী অঞ্চলের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চে স্বপনের আসন অলংকৃত করা।

স্বপনের মতো চিহ্নিত ও প্রমাণিত ব্যাংক লুটেরাকে মঞ্চে স্থান দিয়ে দলের সাধারণ কর্মী সমর্থক ও ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী/কর্মকর্তাদের কাছে প্রচন্ড সমালোচিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীকে অবশ্যই পরিষ্কার ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন