Logo
Logo
×

অনুসন্ধান

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ ভারতকে দেওয়া হচ্ছে না

মুক্তাদির রশীদ

মুক্তাদির রশীদ

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ ভারতকে দেওয়া হচ্ছে না

ছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর সৈয়দপুরের আধুনিকায়নের কাজ ভারত পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)। ভারতের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করছে। আধুনিকায়নের মাধ্যমে সৈয়দপুর বিমানবন্দরটিকে ভবিষ্যতে আঞ্চলিক বিমান যোগাযোগ এবং সম্ভাব্য কার্গো পরিবহন সংযোগের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলা হবে। 

আজ বৃহস্পতিবার সিএএবি’র সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, তারা সম্প্রতি এডিবির সঙ্গে সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং অন্য আরও দুটি বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের বিষয়ে বৈঠক করেছেন।

তিনি বলেন, অনেক দেশ সরকারকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করতে সহায়তা করতে চেয়েছে, যাতে নেপাল এবং ভুটান থেকে আরও যাত্রী ও মালামাল সংযুক্ত করা যায়। 

ভারত তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে কি না এবং তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিএএবি চেয়ারম্যান তড়িঘড়ি করে প্রেস কনফারেন্স শেষ করার আগে বলেন, ‘আমরা নিজেদের মাধ্যমে এটি নির্মাণ করতে চাই।’

তার অনুমান, বিমানবন্দরটির আধুনিকায়নে শুধু ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। আর টার্মিনাল ও অন্যান্য আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় আরও ৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। 

এর আগে ২০২৩ সালে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা সিএএবি পরিদর্শনকালে বাংলাদেশে একটি বিমানবন্দর নির্মাণ এবং পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সেসময় ভারতীয় দূত বাংলাদেশ সরকারের বিমান খাতের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদ্যমান বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ভারতীয় ঋণ সুবিধা (লাইন অব ক্রেডিট) ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

সেসময় প্রণয় ভার্মা সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নির্মাণ ও সম্প্রসারণের বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ পূর্বে ভারতীয় ঋণ সুবিধার মাধ্যমে বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। 

এদিকে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বর্তমান সরকার এখন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য জার্মানির সঙ্গে আলোচনা করছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর। যা ১৯৭৯ সালে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তমানে এটি ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে দৈনিক প্রায় ৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।  

সিএএবি কর্মকর্তারা জানান, কোভিড মহামারির পর অর্থ সংকটের কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ শুধু ভূমি অধিগ্রহণ এবং রানওয়ে নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।  

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং বৃহত্তর বিমান পরিচালনার জন্য রানওয়ে সম্প্রসারণের প্রয়োজন, যা বর্তমানের ৬,০০০ ফুট থেকে ১২,০০০ ফুট পর্যন্ত বাড়ানো উচিত।  

সরকার সম্প্রতি টার্মিনালের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩১০ থেকে ৬৭০ তে সম্প্রসারণ করেছে, যার জন্য ব্যয় হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা।  

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বারবার ঘোষণা করেছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করা হবে। যাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বিশেষত স্থলবেষ্টিত নেপাল এবং ভুটানকে আরও ভালো সেবা দেওয়া যায়।

২০২২ সালে, কাঠমান্ডু ঢাকা থেকে সৈয়দপুর ও বিরাটনগর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক বিমান সংযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং বাংলাদেশে আগমনের ভিসা সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছিল।  

সিএএবি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং ভারতীয় ঋণ সুবিধার অধীনে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করতে চেয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ভূমি কেনার ব্যর্থতা ও বিলম্বের কারণে এটি সম্ভব হয়নি।  

তিনি জানান, ভারতীয় দূত সিইএএবি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বিদ্যমান আকাশসেবা চুক্তি সংশোধন করতে চেয়েছিলেন এবং বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় শহরগুলোর সাথে বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করতে চান।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে, যখন ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন তারা গুয়াহাটি-ঢাকা আকাশসেবা পুনরায় চালু করার উদ্যোগের আহ্বান জানান এবং গুয়াহাটি ও সিলেটের মধ্যে সরাসরি বিমান সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। 

বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে ভারতের সঙ্গে একটি আকাশসেবা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। 

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভারতের তিনটি ঋণ সুবিধার আওতায় ৭.৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে।  

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতরণ করা ঋণ মোট পণ্যের ১৬.৬ শতাংশ।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন