Logo
Logo
×

অনুসন্ধান

জাতীয় নাগরিক কমিটিতে কারা আসছেন

Icon

বিডিনিউজ২৪.কম থেকে

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম

জাতীয় নাগরিক কমিটিতে কারা আসছেন

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার দল আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন পরিত্যক্ত; বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আরেক বড় দল বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সুবাতাস বইলেও নয়া পল্টনের প্রধান কার্যালয় আগের মতো ততটা সরগরম দেখা যায় না।

বড় দুই দলের কার্যালয়ের বাইরে বরং যারা রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, কিছুটা হলেও রাজনীতি সচেতন, তাদের দৃষ্টি এখন বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারের দিকে। গত তিন মাস ধরেই এই ভবনে থাকা দুটি সংগঠনের কার্যালয় ঘিরে লোকজনের আনাগোনাও বেশ।

রূপায়ন টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আর ১৬ তলায় রয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান কার্যালয়।

গত সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকছে নাগরিক কমিটির অফিস। দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন কমিটিতে নাম লেখাতে আসছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের অনেকে সুস্থ হয়ে এখানে আসছেন বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ নিয়ে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও আসছেন নানা প্রয়োজনে।

কার্যালয়ে প্রতিদিন খণ্ড খণ্ড আলোচনা সভা হচ্ছে। বিভিন্ন লেখক বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেমিনার, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হচ্ছে।

সম্প্রতি ওই কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, একটি প্রচলিত রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের মতোই সেখানে শ’খানেক চেয়ার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য একটি কক্ষ আছে; অতিথি ও দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে চেয়ার-টেবিল সাজানো অপেক্ষাগার। এছাড়া কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অন্যদের বসার জন্যও রয়েছে কক্ষ।

কিছুদিন হলো চাউর হয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই দলটি হচ্ছে বলেও প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা রয়েছে।

‘জনশক্তি’ নামে ওই দল করার খবর আসার পর জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ নামে দল করা নিয়ে আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে একাধিক নতুন রাজনৈতিক দল আসবে, সম্প্রতি পঞ্চগড়ে এক অনুষ্ঠানে সারজিস আলমের এমন বক্তব্য, দেশের রাজনীতির মাঠে নতুন দলের আগমনের যে সম্ভাবনা, তার পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছে।

নাগরিক কমিটি আসলে কী করতে চাচ্ছে- প্রশ্ন ছিল আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কাছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গণঅভ্যুত্থানের নাগরিক অংশটিকে সংঘবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশকে পুনর্গঠন করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এই কাজ করতে গিয়ে আমরা কিছু বিপ্লবী চেতনার মানুষ পেয়েছি, নাগরিক সমাজের কিছু প্রতিনিধি পেয়েছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগে থেকেই সংযুক্ত কিছু মানুষও আমরা পেয়েছি। সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবর্তনের আওয়াজ ওঠা অঞ্চল বা খণ্ডগুলোকে আমরা যুক্ত করছি। সামষ্টিকভাবে এই তৎপরতা বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের দিকে নিয়ে যাবে।”

রাজনৈতিক দল গঠনের যে আওয়াজ সে বিষয়ে সরাসরি স্পষ্ট করে কিছু বলতে নারাজ নাগরিক কমিটির সদস্যরা। নাগরিক কমিটি কখনই রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে না বলেও তাদের জোর দাবি।

‘রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণের কোন পর্যায়ে আছেন- এমন প্রশ্নে নাসীরুদ্দীনও খোলাসা করে কিছু বলেননি।

“গত ৫৩ বছরের যে চর্চাটা ছিল সেটা ফ্যাসিবাদী সিস্টেমে রূপ লাভ করেছিল। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশ খুব উদগ্রীব হয়েছিল। সেজন্য তারা মাঠে নেমে এসেছিল। আগামীতে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হবে, সেই প্রক্রিয়ায় এই মানুষগুলো অংশ নেবে। আমরা সবাই একসাথে কাজ করব। যত দ্রুত সম্ভব আমরা আমাদের ডটগুলো একত্রিত করতে সক্ষম হব, তত দ্রুত আমরা সামনে এগিয়ে যাব,” বলেন তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই জুলাই গণআন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিলেন। এর বাইরে যারা বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাদেরকেও কমিটিতে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এর কয়েকজন নেতা।

নাগরিক কমিটির বিভিন্ন পদে ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র শিবির, ছাত্র দলের সাবেক কিছু নেতার নামও দেখা যাচ্ছে। আবার মূল ধারার বাইরে থাকা কাওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও এসে এই কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন। পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর কয়েকজন প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে।

নানা বিশ্বাস, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির মানুষকে সাথে নিয়ে কীভাবে এগোচ্ছে, জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, “জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যারা এসেছেন, তাদের একটাই লক্ষ্য, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশকে পুনর্গঠন। এটা মেনেই সবাই এসেছেন। কমিটিতে নানা জন ও নানা মতের নিজস্ব যে ভাষা সেই ভাষাটাকে কখনও বন্ধ করতে চাই না আমরা। যে যার ভাষায় কথা বলুক। যেভাবে আন্দোলনে একজন মাদ্রাসার ছাত্র একভাবে কথা বলেছেন, একজন স্কুল পড়ুয়া অন্যভাবে কথা বলেছে, একজন শ্রমজীবী মানুষ একভাবে কথা বলেছেন। সেই ভাষাগুলো থাকুক। বাংলাদেশের স্বার্থে আমরা সেই ভাষাগুলো চালু রাখতে চাই।

“যে মানুষগুলোকে দিয়ে বাংলাদেশের সমাজে গত ৫৩ বছরে একটা বিভক্তির চর্চা চলছিল সেই মানুষগুলোই এখন আবার উদ্যোগ নিচ্ছে যাতে তারা একসাথে চলতে পারে। গণঅভ্যুত্থান তাদেরকে একত্র করেছে। মানসিকভাবে সবাই একটা ঐক্যের ভেতরে চলে গেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদেরকে বাস্তবিকভাবে একটা ঐক্যবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।”

অন্তর্ভূক্তির বাস্তবতা কতটুকু?

‘বিভিন্ন মতাদর্শের তরুণরা একসঙ্গে কী ধরনের আদর্শ ও রাজনীতির চর্চা করছে?’ এমন প্রশ্ন ছিল ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব অনিক রায়ের কাছে।

তিনি বলেন, “একটা এক্সপেরিমেন্ট চলছে। নানা মতের এবং নানা বিশ্বাসের মানুষ এখানে রয়েছে। বাংলাদেশকে শুধু শেষ ১৫ বছর না, স্বাধীনতার পর থেকেই জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে নানা নামে। এই গণঅভ্যুত্থান একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। সেটারই এক্সপেরিমেন্ট চলছে, এখান থেকে ইউনাইটেড হওয়ার একটা বয়ান তৈরি করা যায় কি না। এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্ট পজিটিভ-নেগেটিভ সবই হতে পারে। তবে পজিটিভ করার চেষ্টাটাই প্রবল।”

কট্টরপন্থী ইসলামি দল ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নাতি আশরাফ উদ্দিন মাহদিও নাগরিক কমিটির আরেকজন যুগ্ম আহ্বায়ক। বাংলাদেশের কওমি ধারার এই শিক্ষার্থী মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ২০২০ সালের দিকে দেশে ফিরেছেন। গত জুলাই আন্দোলনে মোহাম্মদপুর এলাকার মানুষকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বলে আশরাফ মাহদির দাবি।

চলমান আদর্শিক মিথস্ক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের আগে যেভাবে এক দফা দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সবাই একত্র হয়েছিলাম সেই এক দফা বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্র করতে কাজ করছি আমরা। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কীভাবে করা যায়, সেই উপায় আমরা খুঁজছি।

“বাংলাদেশে নতুন একটা রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণ হবে, এটার সঙ্গে যারা যারা একমত তাদেরকে আমরা নাগরিক কমিটিতে নিয়ে আসছি। এক দফায় আমরা কেবল হাসিনার পদত্যাগ চাইনি, চেয়েছি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। সেই চেষ্টা আমাদের এখনও চলছে। রাজনৈতিকভাবে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই।”

একই ধরনের আকাঙ্ক্ষার কথা শোনা গেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাগরিক কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতার কাছ থেকে।

এই আকাঙ্ক্ষা রাজনৈতিক রূপ পেতে কতদিন লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে নাসীরুদ্দীনের বক্তব্য বরাবরই ছিল কৌশলী।

“মানুষজন খুব দ্রুতই একটা দল চাচ্ছে। দলটা হবে মানুষের দল। কোনো ব্যক্তি বা পরিবারতন্ত্রের দল নয়। দলটা বাংলাদেশবিরোধী কোনো দল হবে না। সেখানে নারীর ক্ষমতায়ন থাকবে, বৈষম্য থাকবে না। দল কিন্তু ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে।

“বাংলাদেশে একটা প্রজন্মগত রূপান্তর হয়ে গেছে। কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়, পুরাতন সিস্টেমের বিরুদ্ধে নতুন একটা সিস্টেম দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখন বাংলাদেশের নতুন মানুষগুলো নেতৃত্ব বুঝে নিতে প্রস্তুত। এখন পরিস্থিতি বলে দেবে যে, কখন দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। নতুন দল গঠন হলেও নাগরিক কমিটি নাগরিক কমিটিই থেকে যাবে। ধীরে ধীরে তা পাড়ায়, মহল্লায়, ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়বে।”

দল গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের ভাষ্য, “অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রায় ২০ থেকে ২৫টি প্ল্যাটফর্ম সক্রিয় হয়েছে। অধিকাংশ প্ল্যাটফর্ম থেকেই নাগরিক কমিটিতে লোক এসেছে। অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন থেকে এসেছে। এমনকি ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মীরা অভ্যুত্থানের আগে আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল তারাও এখন আমাদের সাথে আছে। তারা আগে যেই আদর্শিক বিভক্তির ধারা ছিল সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।

“এখন যারা আছেন তারা একসাথে বসে আদর্শিক লড়াইয়ে না ঢুকে বাংলাদেশ প্রশ্নে কীভাবে আগানো যায় এটার এক ধরনের বোঝাপড়া চলছে। অনেকে আমাদেরকে বলছে একটা মেনিফেস্টো দেন, আমরা বলেছি যে, এটা আমরা দেব না। বাংলাদেশের অন্তত ২০০টি থানায় বা তার চেয়ে বেশি অঞ্চলে কমিটি হয়ে গেলে, একটি প্রান্তিক থানার একজন প্রতিনিধির যে ভয়েসটা সেটাই হবে আমাদের মেনিফেস্টো।”

এই মাসের মধ্যেই ৩০০টি থানায় কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বললেন আরিফুল ইসলাম আদীব।

“থানাগুলোতে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ আড়াইশ পর্যন্ত প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে। শহীদ পরিবার, রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, অধিকার সচেতন ব্যক্তিদের আমরা কমিটিতে নিচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব এলাকায় ভালো আন্দোলন হয়েছিল সেখান যারা যুক্ত ছিলেন তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৫ শতাংশ নারী রাখা হচ্ছে কমিটিতে। স্থানবিশেষ এটা ৫০ শতাংশ রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠী থেকে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

নাগরিক কমিটির অফিসে আর কী কী হচ্ছে?

কমিটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত উপজেলা পর্যায়ের যেসব কমিটি দেওয়া হচ্ছে এগুলোকে বলা হচ্ছে প্রতিনিধি কমিটি। জেলার অধীনে উপজেলা কমিটি এবং সিটি করপোরেশনগুলোতে দেওয়া হচ্ছে থানা কমিটি। এসব কমিটিগুলোকে ক্রমান্বয়ে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপ দেওয়া হবে। তারপর ভোটাভুটির মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠন করা হবে।

কমিটিতে রাজনৈতিক কর্মী, সমাজকর্মী এবং আহত ও শহীদ পরিবারের লোকদের রাখা হচ্ছে। পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবীদের আলাদা শাখা আছে। এদের মধ্যে যারা রাজনীতি করতে আগ্রহী তাদেরকে নিয়ে পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের দিকে এগিয়ে যাবে নাগরিক কমিটি।

“আমাদের এই তৎপরতা এক ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বলতে পারেন নতুন রাজনীতির চর্চা হচ্ছে, পড়াশোনা হচ্ছে এখানে। ন্যারেটিভ টিম নামে একটি ইনটেলেকচুয়াল টিম আছে যার নেতৃত্বে রয়েছেন সারওয়ার তুষার, অনিক রায়, আবু রায়হান, সালেহ উদ্দিন সিফাত, ফয়সাল মোহাম্মদ শান্ত, মুশফিকুস সালেহীন, মুনীরা শারমীন এরকম আরও কয়েকজন। এই টিম বিভিন্ন পক্ষের চিন্তাগুলোর একটা মিথষ্ক্রিয়া তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরকম আরও কিছু তৎপরতা এখানে চলছে,” বললেন নাগরিক কমিটির একজন।

অপেক্ষায় আছেন পর্যবেক্ষকরা

নাগরিক কমিটির নতুন মিথষ্ক্রিয়া কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এবং নতুন রাজনীতির ঘোষণায় কোন আদর্শ স্থান পায় তা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে চান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানের বিভিন্ন মতাদর্শের একসঙ্গে যুক্ত থাকার চর্চাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

সাবেক ছাত্র নেতা ও ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি তারা নতুন কোনো রাজনীতি আনতে পারে, যেটা পুরোনো দিনের রাজনৈতিক পরিচয়কে ছাপিয়ে উঠতে পারে সেটা দেখার বিষয়। এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু তো আমরা দেখছি না।

“এই যে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে পুরোনো পরিচয়ের লোকেরা এক জায়গায় এসেছে, এখন দেখার বিষয় হচ্ছে যে, তারা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দর্শনকে সামনে আনছে। কারণ পূর্বতন পরিচয়ে বিপরীত মেরুর লোকজন এখন একসাথে আছে। একসাথে কমন পয়েন্টে আন্দোলন হতে পারে, অতীতেও এমনটা হয়েছে। কিন্তু একটা রাজনৈতিক দল যদি একটা ঐক্যের জায়গা আনতে পারে সেটা ইন্টারেস্টিং। সেটা দেখার বিষয়, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা।”

চলমান নাগরিক কমিটির তৎপরতা ও ঐক্যের প্রচেষ্টাকে বেশ ইতিবাচক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। তবে তাদের কোনো কোনো দর্শনের সঙ্গে নিজের দ্বিমত থাকার সম্ভাবনার কথাও তিনি প্রকাশ করেছেন।

“যারা গণঅভ্যুত্থান করেছে তাদের একটা বড় অংশ এখানে সমবেত হয়েছে। এটা ভালো, এই শক্তিটা একত্র থাকা উচিত। তারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করে তাহলে তাদের চিন্তাভাবনাগুলো মানুষ জানতে পারবে। একমত না হলেও তাদের মধ্যে একটা সংহতি ছিল, সেই অনুযায়ী তারা কাজ করেছে। তারা তাদের রাজনৈতিক পরিচয়টা আগে প্রকাশ করেনি। রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করলে তাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানটা নাও হতে পারত। কারণ রাজনৈতিক যে দলগুলো আছে সেই দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ছিল না।”

এবারের গণআন্দোলনে মানুষের ঐক্যের সঙ্গে আগেকার আন্দোলনগুলোর মিল রয়েছে উল্লেখ করে মুশতাক হোসেন বলেন, “যখন ছাত্ররা দলমতের ঊর্ধে উঠে সংঘবদ্ধ হয় তখনই মানুষ তাদের পেছনে সমবেত হয়। ঊনস্ত্তর থেকে শুরু করে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানেও আমরা তাই দেখেছি। যারা অভ্যুত্থান করেছে তাদের দলীয় পরিচয় সামনে আনেনি। তাদের অধিকাংশই নাগরিক কমিটিতে এসেছে, এটা ভালো। তাদের সব চিন্তাভাবনার সঙ্গে যদি একমত নাও হই, এখানে নিশ্চয় কিছু উপাদান থাকবে সেটা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ।”

“তাদের পলিটিকাল ফিলসফির সঙ্গে একমত না হলেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা, বৈষম্য বিলোপের পথে যাত্রা করা এরকম কিছু না কিছু তো অবদান রাখবেই। প্রাক্তন ছাত্রনেতা হিসাবে সেই আশা তো আমি করতেই পারি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, “তারা এক ধরনের সমঝোতামূলক রাজনৈতিক পরিস্থিতি গড়ে তুলতে চায়, এইটা ঠিক আছে। এটার মধ্যে একটা নতুনত্ব আছে। আবার কিংস পার্টির যে অভিজ্ঞতা তারা যদি সেটার রিপিট করে তাহলে তো তারা টিকবে না। তাদের একটা পলিটিক্যাল পার্টি থাকতে হবে এবং নিজেদের আইডিওলোজি ঠিক করতে হবে।”

নাগরিক কমিটির অনেক বিষয় এখনও পরিষ্কার নয় উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, “নাগরিক কমিটি পোস্ট আইডিওলোজিক্যাল পলিটিকসে বিশ্বাসের কথা বলে। পোস্ট আইডিওলোজি মানে নো আইডিওলোজিও তো হতে পারে। জিনিসটি তারা এখনও পরিষ্কার করতে পারেনি। একটা রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার জন্য কিছু আইডিওলোজি লাগবে, কিছু ডেডিকেটেড লোক লাগবে, নিজস্ব অর্থায়নের সোর্স লাগবে, আবার কমিটমেন্ট লাগবে। নিজেদেরকে লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠাতে হবে। এগুলো যদি তারা করতে পারে, তাহলে আমি মনে করি তাদের সম্ভাবনা আছে। এগুলো করতে না পারলে তারাও একই পরিণতি ভোগ করবে। নাগরিক কমিটির মধ্যে ডেমোক্রেটিক প্র্যাকটিস করবে কি করবে না সেটাও একটা প্রশ্ন।

“তারা বলতে চাচ্ছে সবাইকে নিয়ে ইনক্লুসিভ পলিটিকস যেখানে সবাই সবার মতামত প্রকাশ করবে। একটা প্ল্যাটফর্মে যদি ১০ রকমের মতামত, ১০ রকমের আদর্শ থাকে সেই প্ল্যাটফর্মকে কীভাবে কোহেরেন্ট রূপ দেওয়া যাবে? একটি দলের ভেতরে ১০ রকমের মতাদর্শের লোককে কী ম্যানেজ করা সম্ভব? এই বিষয়টা তারা এখনও ক্লিয়ার করতে পারেনি বলে আমার মনে হচ্ছে।”

রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও ‘নতুন বাংলাদেশের’ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ছিলেন। আর আখতার হোসেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক।

৫৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির কমিটির মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন।

সর্বশেষ তৎপরতা হিসেবে গত ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সদস্যদের সমন্বয়ে ৩৬ সদস্যের ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি’ গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন