Logo
Logo
×

অনুসন্ধান

রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি জাহাঙ্গীরের নিয়মবহির্ভূত ঋণ অনুমোদন

Icon

আব্দুর রহমান

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম

রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি জাহাঙ্গীরের নিয়মবহির্ভূত ঋণ অনুমোদন

ছবি: বাংলা আউটলুক

রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেড নামের একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ওভারড্রাফট পাঁচ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি রয়েছে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটি বড় অংকের ঋণ নিয়ে সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় আছে। 

বিতর্কিত এই ঋণটি ২০২৩ সালের আগস্টে অনুমোদিত হয়। অথচ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া ঋণ ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার মার্কিন ডলার। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণীর ডিগ্রিধারী জাহাঙ্গীর ঋণ প্রদানে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে এবং কোম্পানিটির বিদ্যমান অর্থ পরিশোধের অক্ষমতাকে উপেক্ষা করেই ওভারড্রাফট ওই ঋণ অনুমোদন করেছিলেন।

এছাড়া জাহাঙ্গীরের সঙ্গে অভন্তি কালার টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ আসলাম সানির সরাসরি যোগসূত্রের অভিযোগও উঠেছে। যা ওই ঋণ দেওয়ার সঙ্গে যোগসাজশের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এই ঘটনাটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপর ব্যাপক নজরদারির মধ্যেই ঘটেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আর্থিক অনিয়মের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরসহ ছয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সরকার।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রূপালী ব্যাংক বর্তমানে তাদের ঋণ প্রদান কার্যক্রম নিয়ে বাড়তি নজরদারিতে আছে। 

এ ছাড়া ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেডে শ্রমিক অসন্তোষও দেখা গিয়েছিল। ওই সময় শ্রমিকরা কয়েক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির ফতুল্লা কারখানায় ছয় ঘণ্টা ধর্মঘট করে। 

বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটের এই ঘটনায় কোম্পানিটির নাজুক আর্থিক অবস্থাকে আরও বেশি করে ফুটিয়ে তুলে। আর তাই এমন একটি কোম্পানিকে রূপালী ব্যাংক ওই বড় আকারের ওভারড্রাফট ঋণ অনুমোদনের আগে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেছে কিনা সে প্রশ্নও সামনে এনেছে।

এসব অভিযোগের স্বপক্ষের সমস্ত কাগজপত্র বাংলা আউটলুকের হাতে এসেছে। যা দেখে মনে হয়েছে এই ঘটনাটিও দেশের আরেকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা। 

২০১৮ সালের ১৪ মে এক বোর্ড মিটিংয়ে ব্যবস্থাপ পরিচালককে নিয়ন্ত্রক নির্দেশিকা সব শর্ত অনুসরণ করে বিশ্বাসযোগ্য গ্রাহককে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নিয়ন্ত্রক নির্দেশিকার প্রধান শর্ত হল বিদ্যমান ঋণ আগে পরিশোধ করতে হবে।

তবে অবন্তি কালার টেক্সটাইলসকে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর প্রতিষ্ঠিত ওইসব নিয়মাবলী লঙ্ঘন করেছেন বলে বলে মনে করা হচ্ছে। 

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফোনে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। 

গত ১২ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জাহাঙ্গীরকে তার পদ থেকে অপসারণের দাবি করে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুসের দাখিল করা নোটিশে জাহাঙ্গীরের যোগ্যতা এবং তার নিয়োগের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। 

যদিও জাহাঙ্গীর তার পুরো ক্যারিয়ার রূপালী ব্যাংকেই কাটিয়েছেন। তবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

রূপালী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রোফাইল অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে একজন কর্মকর্তা (অফিসার) হিসেবে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর তার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ডিভিশনকেও (এফআইডি) তিনি একই তারিখের কর্মকর্তা হিসেবে কথা জানিয়েছেন। 

যদিও ব্যাংকটির ২০১১ সালের হিউম্যান রিসোর্চ পলিসিতে উল্লেখ করেছে, ১৯৮৬ সালে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড বেসরকারিকরণের কারণে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে অফিসার পদ নিয়োগ বন্ধ ছিল। পরে ১৯৯৮ সালে এই পদে নিয়োগ পুনরায় শুরু হয়।

এরপর ১৯৯৮, ২০০০, ২০০১ এবং ২০০৯ সালে ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির (বিআরসি) মাধ্যমে অফিসার এবং সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অফিসার পদে নিয়োগে দীর্ঘ ওই বিরতির কারণে প্রশ্ন উঠে, কীভাবে জাহাঙ্গীর ওই সময়ে অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

এছাড়াও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর পদের ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণীর ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য নয়। উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক—দুই পরীক্ষাতেই জাহাঙ্গীর তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। 

এসব অযোগ্যতা সত্ত্বেও ২০২২ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার নিয়োগ পাওয়া নিয়ন্ত্রক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ব্যাংকটির হিউম্যান রিসোর্চ পলিসি অনুযায়ী, অফিসার পদের জন্য স্নাতক ডিগ্রিধারী জুনিয়র অফিসারদের ন্যূনতম দুই বছরের সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং তৃতীয় শ্রেণির ডিগ্রি এই পদে গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি অফিসার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর অবশ্যই কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।

বিশেষত যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিতে এমন উন্নতি প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এদিকে, বাংলা আউটলুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ আসলাম সানি বলেছেন, ‘আমরা রপ্তানির উদ্দেশে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ পেয়েছি।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করার ফলে ব্যাংকের সঙ্গে আমরা দৃঢ় একটি সম্পর্ক তৈরি করেছি। যখন আমাদের মতো দীর্ঘদিনের গ্রাহক রপ্তানি ব্যবসায় সমস্যার মুখে পড়ে, তখন রূপালী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের সহযোগিতা করা উচিত এবং প্রতিষ্ঠানটি ঠিক তাই করেছে।’

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন