সামিটের হাতে জিম্মি বাংলাদেশের ইন্টারনেট খাত
আবু সুফিয়ান
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ এএম
ছবি: বাংলা আউটলুক
বাংলাদেশের ইন্টারনেট খাতে সামিট গ্রুপের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সব বন্দোবস্ত করেছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সরকার। দেশের চাহিদার অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যান্ডউইথের সরবরাহ থাকার পরও রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০২২ সালে সামিটসহ তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স।
গ্রাহক পর্যায়ে যেতে প্রতিটি ধাপেই সামিটকে লাইসেন্স দিয়ে এই খাতে একচেটিয়া আধিপত্য দেওয়া হয়েছে, যা এই খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ খাতের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কোনোরকম নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট/ব্যান্ডউইথ দিচ্ছে কারা?
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দুইভাবে সংযুক্ত। একটি হলো সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে, অপরটি ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবলের (আইটিসি) মাধ্যমে।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে বিএসসিপিএলসি, যা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে সরকারেরই একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। বিএসসিপিএলসি তাদের কার্যক্রম শুরু করে সিমিউই-৪ ক্যাবলের মাধ্যমে, যা কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বিএসসিপিএলসি যুক্ত হয় সিমিউই-৫ ক্যাবলে, যা কুয়াকাটা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এই দুই ক্যাবলের মাধ্যমে বিএসসিপিএলসি বর্তমানে প্রায় ৭০০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহের সক্ষমতা রাখে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠানও বিএসসিপিএলসি। একে সরকারের অলঙ্কার হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।
বিএসসিপিএলসির এক কর্মকর্তা জানান, সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যাকআপ হিসেবে ২০১২ সালে ৬টি এবং ২০১৪ সালে ১টি, অর্থাৎ মোট ৭টি প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ব্যান্ডউইথ আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হয়। সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতির সম্মুখীন হলে ইন্টারনেট সেবা যেন বিঘ্ন না হয় সেই উদ্দেশ্য থেকে শুধুমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই আমদানি চালু করা হয়। তখন শুধু সিমিউই-৪ সাবমেরিন ক্যাবল চালু ছিল এবং একটি ক্যাবল যে কোনো সময়ই যে কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কায় আইটিসি লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সাবমেরিন ক্যাবল ও আইটিসি কে, কত ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে?
বিএসসিপিএলসি কর্মকর্তারা জানান, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের কথা থাকলেও, ব্যাকআপ হিসেবে চালু হওয়া আইটিসিই মূলত দেশের ব্যান্ডউইথ সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি বাড়তে থাকে। এর একটি বড় কারণ হলো, বেসরকারি অপারেটরদের সাবমেরিন ক্যাবলের মতো বিশাল কাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়নি। শুধু অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কম খরচে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের সুবিধা পাওয়া গেছে, যা সাবমেরিন ক্যাবলের তুলনায় কিছুটা কম মূল্যে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও গুণগত মান বিবেচনায় ভারত থেকে আমদানিকৃত ব্যান্ডউইথ সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ অপেক্ষা নিম্নমানের ছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় ৬২০০ জিবিপিএস। এর মধ্যে বিএসসিপিএলসি সরবরাহ করছে ২৯০০ জিবিপিএস। বাকি ৩৩০০ জিবিপিএস সরবরাহ করছে বাকি ৭টি আইটিসি অপারেটর, যার মধ্যে সামিট সরবরাহ করছে ২৫০০ জিবিপিএস।
অর্থাৎ, দেশের মোট চাহিদার ৪৬ ভাগ সরবরাহ করছে বিএসসিপিএলসি এবং বাকি ৫৪ শতাংশ সরবরাহ করছে আইটিসি, যার সিংহভাগই আমদানি হচ্ছে সামিটের মাধ্যমে।
আইটিসির মাধ্যমে আনতে কেমন খরচ হচ্ছে?
বিটিআরসিকে প্রেরিত একটি চিঠি থেকে দেখা যায়, মাসে ৪/৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এই ব্যান্ডউইথ আমদানি করা হচ্ছে। অর্থাৎ বছরে ৫০-৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে শুধু ভারত থেকে এই ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে।
বিএসসিপিএলসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশের চাহিদা ৬২০০ জিবিপিএস পূরণ করেও বিএসসিপিএলসির প্রায় ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত থাকবে; সেখানে বিএসসিপিএলসি বর্তমানে সরবরাহ করছে মাত্র ২৯০০ জিবিপিএস। অর্থাৎ নিজেদের সক্ষমতার ৬০% ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মোট কথা বিএসসিপিএলসির পূর্ণ সক্ষমতা আছে এই চাহিদা পূরণের। তাই ভারত থেকে আমদানির প্রয়োজন নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
(নিচের ছকটিতে ব্যান্ডউইথের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে)
তাহলে আইটিসির কী প্রয়োজন?
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু আইটিসি খাতে প্রাইভেট সেক্টরের অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে, তাই তাদের পুরোপুরি বন্ধ না করে ব্যান্ডউইথ ক্যাপিং করে দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যান্ডউইথ সরবরাহের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে সামিটকে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া অযৌক্তিক।
তারা বলছেন, আইটিসি থেকে কোনো গ্রাহক তার প্রয়োজনের সর্বোচ্চ ৩০% ব্যান্ডউইথ নিতে পারবে, বাকি ৭০% সাবমেরিন ক্যাবল থেকে নিতে হবে—এমন একটি নীতিমালা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং দেশের রিজার্ভ সাশ্রয় করা দরকার।
বিএসসিপিএলসি যেহেতু দেশের চাহিদার ১০০% ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করতে সক্ষম, তাই দেশের স্বার্থে পর্যায়ক্রমে আইটিসির ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের এই পরিমাণ ৩০ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনা যেতে পারে। এ বিষয়ে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র (স্মারক নংঃ ১৪.৩৪.০০০০.৪০৪.১৬.০০২.২৩.৮৭) দিয়েছিল। কিন্তু, রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আর হয়নি।
সামিটের কারসাজিতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ব্যান্ডউইথ চাহিদার ৫৪% পূরণ করছে আইটিসি অপারেটরগুলো; আর বাকি ৪৫% বিএসসিপিএলসি। আইটিসি ব্যান্ডউইথের প্রায় ৮০% আমদানি করছে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। বিটিআরসির রেভিনিউ শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসি সাবমেরিন ক্যাবল লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ৩% রেভিনিউ শেয়ার করছে, অথচ আইটিসি অপারেটরদের জন্য তা মাত্র ১%।
গত অর্থবছরে বিএসসিপিএলসির রেভিনিউ ছিল প্রায় ৫১৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল লাইসেন্স অনুযায়ী বিএসসিপিএলসি প্রায় ১৮ কোটি টাকা বিটিআরসিকে পরিশোধ করেছে।
তবে, সামিট বা অন্যান্য আইটিসি অপারেটররা এর চেয়ে বেশি ব্যবসা করলেও রেভিনিউ শেয়ারিং মাত্র ১%, যার ফলে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, যা মূলত একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সুবিধা দিচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আইটিসি থাকার পরে বেসরকারি খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের প্রয়োজন কী?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসসিপিএলসি যেখানে একাই দেশের বর্তমান চাহিদা পূরণের সক্ষমতা রাখে পাশাপাশি বেসরকারি খাতে আইটিসিও ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে, সেখানে নতুন করে বেসরকারি খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স প্রদানের কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ভবিষ্যত চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০২১ সালে বিএসসিপিএলসিকে সিমিউই-৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছে এবং এই প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। উক্ত প্রকল্প শেষে বিএসসিপিএলসির মোট ব্যান্ডউইথ ২০ হাজার জিবিপিএস অতিক্রম করবে যা বর্তমান চাহিদার তিন গুণেরও বেশি।
সিমিউই-৬ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে সরকার যে বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করবে তাতে বেসরকারি খাতে লাইসেন্স দেওয়ার দরকার ছিলো না বলে মন্তব্য করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তবে, সব কিছুকে তোয়াক্কা না করেই ২০২২ সালে বেসরকারি খাতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেয় তৎকালীন সরকার।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশের ব্যান্ডউইথের বর্তমান চাহিদা, বিএসসিপিএলসির বর্তমান সক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সামিটসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাত সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, দেশের ইন্টারনেট চাহিদার প্রায় সাড়ে তিন গুণ সক্ষমতা বিএসসিপিএলসি ২০২৫ সালের মধ্যে অর্জন করবে। বিটিআরসি এ বিষয়টি অবগত থাকার পরেও রাজনৈতিক চাপে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
সেই প্রকৌশলী জানান, সাবেক সচিব খলিলুর রহমানের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে প্রাইভেট সেক্টরে লাইসেন্স দেওয়া হয়, যা ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পরবর্তীতে জুনায়েদ আহমেদ পলক সামিটের কাজে গতি আনতে তাদের ল্যান্ডিং স্টেশনের জায়গা প্রদানের বিষয়ে কক্সবাজার জেলার ডিসির সঙ্গেও মিটিং করেছিলেন বলে জানা যায়।
সামিটের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সখ্যই এই লাইসেন্স প্রদানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান বিএসসিপিএলসির একাধিক কর্মকর্তা।
লাইসেন্স প্রাপ্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা খতিয়ে দেখলে রাজনৈতিকভাবে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
সামিট কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের ছোট ভাই। ফারুক খান গোপালগঞ্জ-১ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বন্ধু।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেটাকোর সাবকম কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক।
সিডিনেট-এর পরিচালক হিসেবে আছেন চৌধুরী নাফিজ সারাফাত যিনি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের নানান আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে জড়িত ছিলেন। আর দেশের ইন্টারনেট তুলে দেওয়া হয়েছিল সাবেক সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কিছু গোষ্ঠীর হাতে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বেসরকারি খাতে লাইসেন্স প্রদানে জড়িত ছিলেন বিএসসিপিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান।
বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আবেদন থেকে শুরু করে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন বিএসসিপিএলসির সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বেসরকারি খাতে এই ব্যবসা চালুর অন্যতম ক্রীড়নক তিনি।
মশিউর রহমান ২০২২ সালে বিএসসিপিএলসি থেকে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে ফেরত যান এবং একই বছর তিনি প্রাইভেট সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিডিনেটের সিইও পদে যোগদান করেন।
জানা যায়, মশিউর রহমান বিএসসিপিএলসিতে থাকা অবস্থাতেই সামিটের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। তার মেয়াদকালে সিমিউই-৪ প্রকল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদন করতে চাননি, যা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান এসে প্রায় ৩৮০০ জিবিপিএস বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধু তাই নয় চার বছরেরও অধিক সময় বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় কোম্পানির অনেক স্পর্শকাতর তথ্য তিনি তার বর্তমান প্রতিষ্ঠানসহ অন্য দুইটি প্রাইভেট সাবমেরিন ক্যাবল অপারেটর মেটাকোর ও সামিটের কাছে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কেপিআইয়ের জায়গা এবং ডাক্ট লিজ নিয়েও বিতর্ক
চলতি বছরের ২৪ জুলাই বিএসসিপিএলসির কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে জমি এবং পিভিসি ডাক্ট লিজ চেয়ে চিঠি পাঠায় প্রাইভেট তিন সাবমেরিন ক্যাবল প্রতিষ্ঠান। পিভিসি ডাক্টের তথ্য তাদেরকে কোম্পানির অভ্যন্তর থেকে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।
সেই চিঠি যাচাই বাছাই না করেই বিএসসিপিএলসির ৩১ জুলাই এর ২২৮ তম পর্ষদ সভায় উত্থাপন করা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের একজন সাবেক পরিচালককে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, বিষয়টি উত্থাপন করায় বর্তমান সচিব অত্যন্ত উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন এবং কার স্বার্থে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে এ বিষয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
বেসরকারি খাতে লাইসেন্স প্রদানে বিটিআরসির ভূমিকা
চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যান্ডউইথের যোগান থাকা সত্ত্বেও মূলত সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে সুবিধা দিতেই বিটিআরসিকে হাসিনা সরকার বাধ্য করে বেসরকারি খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স প্রদানে। এর ফলে সামিট আইটিসি, সাবমেরিন ক্যাবল, আইআইজি এবং এনটিটিএন এর ওপর একক কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রাহক পর্যায়ে যেতে প্রতিটি ধাপেই সামিটকে লাইসেন্স দিয়ে এই খাতে একচেটিয়া আধিপত্য দেওয়া হয়েছে, যা এই খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
তারা জানান, সামিটের হাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করে, সেবার মান প্রভাবিত করে গ্রাহকদের জিম্মি করে নিজের সুবিধা মতো ব্যবসা চালাবে। এমনকি এই খাতে নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রবেশের সুযোগও সীমিত হয়ে যাবে।
তাছাড়া দেশের পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিগত সরকারের মদদপুষ্ট প্রতিষ্ঠানের একক আধিপত্যে থাকায় যেকোনো মুহূর্তে পুরো ইন্টারনেট অচল করে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে।
বিএসসিপিএললিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নিজস্ব শতভাগ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এবং আরো একটি সরকারি সাবমেরিন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বেসরকারি খাতে এই লাইসেন্স প্রদান অনেকটা আত্মহত্যারই শামিল। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাবে, অন্যদিকে ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক দেশের জনগণও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসি। এই কোম্পানিকে সরকারের কোনো ভুর্তুকি দিতে হয় না। কিন্তু প্রাইভেটে লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এর পরিণতি টেলিটক ও বিটিসিএলের মতোই হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।