Logo
Logo
×

অনুসন্ধান

চাঁপাইয়ের সন্ত্রাসীদের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ডিআইজি নুরুল এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে

Icon

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম

চাঁপাইয়ের সন্ত্রাসীদের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ডিআইজি নুরুল এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে

সৈয়দ নুরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে আতঙ্কের নাম ছিল কথিত ‘এসপি লীগ’। এই এসপি লীগের আনাগোনা ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। আর দূর থেকে এই এসপি লীগের সবধরনের কার্যক্রম চোখে চোখে রাখতেন ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। ছিল নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীও। 

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পান থেকে চুন খসলেই যাকে-তাকে হুমকি থেকে শুরু করে মারধর করতেন এসপি লীগের সদস্যরা। তাদের আয়ের মূল উৎস ছিল চাঁদাবাজি ও জমি দখল। পাশাপাশি মাদকের কারাবারতো ছিলই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই গ্রুপের সদস্যরা যেসব এলাকায় নিয়মিত মাদকদ্রব্য সেবন করতো, ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ঢুকত না। কারণ এসব বিষয়ে নজর না দিতে কড়া বার্তা ছিল ডিআইজি নুরুলের।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি ও ব্যবহার করে চাকরি পাবার অভিযোগও রয়েছে নুরুলের বিরুদ্ধে।

নুরুলের উত্থান  

২০১৫ সালে নুরুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ছিলেন। এ সময় তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ৬৮ বিঘা দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করেন। তারপর থেকেই আলোচনায় আসেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর থেকে তার চোখ পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে। পুলিশে চাকরির সুবাদে সরাসরি তিনি রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তার পরিবারের সদস্যদের সুযোগ করে দেন। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের দমন-পীড়নেও ছিল নুরুলের ব্যাপক ভূমিকা। এসব নিয়ে সাংবাদিকদের লেখাও ছিল বারণ। কারণ গণমাধ্যমকর্মীদের চাপে রাখতো নুরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী।

নুরুলের নির্দেশে ৬ মার্ডার 

২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নুরুল ইসলামের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এমন অভিযোগও আছে, এসব মামলায় তার মতের বিরোধিতাকারীদের ‘ফাঁসানো’ হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নুরুল ইসলামের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট শিবগঞ্জের বাসিন্দা রবিউল ইসলামকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি। ২০১৬ সালের ২৫ মে পানু মন্ডল নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করা হয়। একই বছরের ১৮ অক্টোবর প্রতিবন্ধী কিশোরী জান্নাতিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে নুরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী। এরপর তার নির্দেশে পুলিশের একটি গ্রুপ ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক তুহিনকে হত্যা করা হয়। তুহিন ছিল বাবার একমাত্র সন্তান। আর ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল বিকালে ইফতারি আনতে যাওয়ার সময় যুবলীগ নেতা খায়রুল আলম জেমকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে হত্যা করে নুরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী।

ক্ষমতার জোরে দুভাইকে বানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি 

নুরুর ইসলামের আপন দু’ভাই নজরুল ইসলাম ও মুনিরুল ইসলাম। নজরুল শিবগঞ্জ উপজেলার একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। একই সঙ্গে ইটভাটা ব্যবসায়ী। আরেক ভাই মুনিরুল পেশায় ছিলেন ঠিকাদার।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতার জোরে নুরুল তার ভাই নজরুলকে উপজেলা পরিষদের চেয়্যারমান বানান। নজরুল নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অথচ তিনি (নজরুল) ছিলেন শিবগঞ্জ পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের বিএনপির সদস্য। তারপরও ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাদের বাদ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আপন ভাইকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেন নুরুল। নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি নিজের ক্ষমতার ব্যবহার করে নজরুলকে চেয়ারম্যান বানান নুরুল। পরবর্তীতে তার ভাইকে বানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

এদিকে তার আরেক ভাই মুনিরুলকে বানিয়েছেন শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। এই নির্বাচনেও ছিল পুলিশের প্রভাব এমনই দাবি প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের।

 ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ 

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ এ সরকারের শাসনামলে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছিল। সংগঠনটির একাংশকে নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিআইজি নুরুল। তার পরিবারের বিপক্ষে কেউ কথা বললে, তাদের দমানোই প্রধান কাজ ছিল এই অংশের। যার কারণে তাদের ওপর ‘দরদি নজর’ ছিল নুরুলের। এই জন্য তিনি জেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকে পদ পাইয়ে দিতে তদবির করতেও পিছপা হননি নুরুল। এসব ছাত্রদের প্রত্যক্ষ মদদ দিতেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. সাইফ জামান আনন্দ। তাকে সভাপতিও বানিয়েছেন নুরুল।

পুলিশি ঝুট-ঝামেলা দেখতেন এএসপি মাহবুব 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খাঁন। এই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ সখ্যতা ছিল ডিআইজি নুরুলের। নিজের লোকদের পুলিশি ঝামেলা থেকে বাঁচাতে নুরুল এই কর্মকর্তাকে ‘খুশি রাখতেন’। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব গত কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি হন।

অভিযোগ আছে, শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে নুরুলের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন গোলাম আজম। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন খায়রুল আলম জেম। তখন ভোটারদের বেশ সমর্থন ছিল জেমের পক্ষে। অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নুরুল নতুন ফন্দি আঁটেন। তৎকালীন এএসপি মাহবুবকে দিয়ে জেমের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা দায়ের করানো হয়। ভোটগ্রহণের দিন তাকে ওই এলাকায় যেতে না দিয়ে ১১০ ভোটে পরাজিত দেখানো হয়। অথচ সেই সময় জেম দাবি করেন-তিনি ৫ শতাধিক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। এই নিয়ে জেম সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। 

অভিযোগের বিষয়ে মাহবুব আলম খাঁনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকরের পতনের পর সৈয়দ নুরুল ইসলামকে রাজশাহী সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি সারদা পুলিশ একাডেমিতে যোগ দেননি। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন