Logo
Logo
×

অনুসন্ধান

ভ্যানের লাশের স্তূপ করে রাখা ভিডিওটি আশুলিয়া থানা রোডের

Icon

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম

ভ্যানের লাশের স্তূপ করে রাখা ভিডিওটি আশুলিয়া থানা রোডের

ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হঠাৎ করে গতকাল শুক্রবার (৩০ আগস্ট) একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানের ওপর অনেকগুলো লাশ। লাশগুলো ওয়ালক্লথ বা এইরকম কিছু  একটি দিয়ে ঢেকে রাখা। তার ওপর আরও একটি লাশ পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তিসহ দুজনে ছুড়ে লাশের স্তূপের ওপর রাখেন। তার পাশেই পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হেলমেট ও অস্ত্রসহ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। মানুষ জানতে চাচ্ছে এই ঘটনা কোথায় ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের ভ্যানের লাশের স্তূপ করে রাখা মর্মান্তিক ঘটনাটি আশুলিয়া বাইপাইল এলাকার থানা রোডের গলিতে। গুলিবিদ্ধ ৭ শিক্ষার্থীর মরদেহ থানার পাশেই ইসলাম পলিমারস অ্যান্ড প্লাস্টিসাইজারস লিমিটেডের অফিসার ফ্যামিলি কোয়াটারের দেয়াল ঘেঁষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। পরে পুলিশ লাশগুলো একত্রিত করে ভ্যানের ওপর স্তূপ করে রাখেন। এরপরে ঘটে আরও মর্মান্তিক ঘটনা। যে ঘটনা বর্ণনা করাও কঠিন।

থানার সামনের বিল্ডিং থেকে পুরো ঘটনা স্বচক্ষে দেখা এক ব্যক্তি জানান, বিকেলে থানা ফটকের সামনে উত্তেজিত জনতার ওপর পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে থানার গেটের সামনেই ১০ থেকে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। কয়েক মিনিট ধরে ওখানে গোলাগুলি চলে। পরে জীবিত কয়েকজনকে নীচু হয়ে এসে ছাত্ররা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। তারপরেও ৬ থেকে ৭ জন ওখানে পড়েছিল। তখন আশপাশের সব অলিগলি জনগণ ঘিরে ফেলে। রাস্তা থেকেও লোকজন থানার দিকে রওনা হয়। পরে থানা থেকে সব পুলিশ সশস্ত্র হয়ে একযোগে বেরিয়ে আসেন। তারা গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসেন।

তবে ভ্যানে লাশের স্তূপ করা জায়গাটি পলিমারস এন্ড প্লাস্টিসাইজারস লিমিটেডের অফিসার ফ্যামিলি কোয়াটারের গেটে। ওই গেটের অপরপাশে সাদিয়া রাজশাহী কনফেকশনারি অ্যান্ড মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ফাহিমা আক্তার বলেন, ঘটনাটি আমার দোকানের সামনেই ঘটেছে। ৫ আগস্ট বিকেলে সাড়ে ৪টা হবে। সেদিন গুলি খেয়ে থানার সামনে পড়ে থাকা মরদেহগুলো  ভ্যানে তুলছিলেন পুলিশ। আমাদের চোখের সামনেই তুলেছে। প্রথমে লাশগুলো তুলে ব্যানার দিয়ে ঢেকে থানার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসে।

ওইদিন ঘটনাস্থলে থানা রকি আহমেদ নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন, পুলিশ প্রথমে গেটে এসেই ইসলাম পলিমারস অ্যান্ড প্লাস্টিসাইজারস লিমিটেডের অফিসার ফ্যামিলি কোয়াটারের সামনে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ ৭ জনকে একটি প্যাডেল  ভ্যানে তুলেন। পরে তাদের থানার সামনে আনেন। পরে লাশগুলো থানার পার্কিংয়ে থাকা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে তুলে আগুন দেওয়া হয়। ৭ জনের লাশ আগুনে পুড়িয়ে থানা থেকে সব পুলিশ বেরিয়ে থানা গলি দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। আর গুলি ছুড়তে থাকেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া একজনের হাতে তখনো হাতকড়া ছিল।

লাশের স্তূপ করা জায়গাটি হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে আসলাম হোসেন বলেন, ভালো করে দেখেন। ভিডিওতে যে পোস্টারটি দেখা যাচ্ছে। সেটা এখনো দেয়ালে অক্ষত আছে। কিছু বালুর বস্তা ছিল সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেদিন পুরো থানা রোডেই লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পুলিশ ভ্যান নিয়ে সব লাশ এক জায়গায় জড়ো করে। আম টোকানোর মত করে পুলিশ গলি দিয়ে লাশ টুকিয়েছে। পরে লাশগুলো থানার সামনে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেখেনি আশপাশে এমন কোনো মানুষ ছিল না।  এ এক ভয়ানক ঘটনা। মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে।

বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডের অটোরিকশা চালক বলেন, পুলিশ থানা থেকে মেইন রোডে এসে ডান বাম দু’পাশেই গুলি চালায়। রাস্তার দু’পাশে গুলি চালাতে চালাতে তারা নবীনগরের দিকে আগাতে থাকেন। তখন মানুষ জীবন বাঁচাতে যে যার মতো দৌড়ে পালিয়েছে। এক মিনিটের জন্যও পুলিশ গুলি বন্ধ করেনি। যতক্ষণ হেঁটেছে ততক্ষণই তারা গুলি ছুড়েছে। রাস্তার দু’পাশে পথচারী, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের শত শত মানুষ ওইদিন গুলিবিদ্ধ হয়। এমন দিন কখনো দেখেনি বাইপাইলবাসী।

সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন পথচারী বলেন, পুলিশ থানা রোড থেকে গুলি করতে করতে সোহেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। তখন গুলির শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যায়নি। চারদিকে মানুষের চিৎকার। বাঁচাও বাঁচাও। মনে হয়েছে যুদ্ধ লেগেছে। তখন মানুষ বাসাবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। রাত তখন ৯টার বেশি বাজে। পুলিশ সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আর গুলি ছুড়ছিলেন। এভাবে তারা পল্লী বিদ্যুৎ পর্যন্ত চলে যায়। এই সময়ে শত শত মানুষকে গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছি।

সূত্র: মানবজমিন

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন