ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও KAS ফেলো আকিব যখন সন্ত্রাসীর ভূমিকায়
তুষার আমান
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার বিভিন্ন মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য দূর করার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত সোম ও মঙ্গলবার (১৫ ও ১৬ জুলাই) বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশ হামলা করেছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় ঢাকায় এক, চট্টগ্রামে তিন এবং রংপুরে একজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন।
এসব ঘটনায় কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অনেক নেতাকে দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ।
সংবাদমাধ্যমে এবং বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ ১৫ জুলাই সশস্ত্র হয়ে তার সঙ্গীদের নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান।
একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ১৫ জুলাই বিকেলে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আকিব দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করছেন। বাংলা আউটলুকের কাছে এসব ভিডিও এবং ছবি সংরক্ষিত আছে।
আকিব জার্মানভিত্তিক সংস্থা কোনরাড এডেনিয়ার স্কুল ফর ইয়াং পলিটিশিয়ান্সের একজন ফেলো। তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপের ২৪-২৫ বর্ষের জন্যে মনোনীত হয়েছেন বলে কোনরাড এডেনিয়ার ফাউন্ডেশন (KAS) এর গত ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল। নিচে কোনরাড এডেনিয়ার ফাউন্ডেশন আকিবকে ফেলো মনোনীত করার বিজ্ঞপ্তির একটি ছবি দেওয়া হলো।
কোনরাড এডেনিয়ার ফাউন্ডেশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণ রাজনীতিকদের নেতৃত্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
সংস্থাটি তাদের ‘কোনরাড এডেনিয়ার স্কুল ফর ইয়াং পলিটিশিয়ান্স’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে, ‘একদল তরুণ রাজনৈতিক নেতা তৈরি করা যারা এশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতা এবং ইতিবাচকতা বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেবে।’
এই প্রশিক্ষণের এটাও একটি উদ্দেশ্য যে, ‘জবাবদিহিতা, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, সাম্য, আইনের শাসন, সহনশীলতা এবং জনতার সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতি চর্চায় উৎসাহিত করা।
কিন্তু ফুয়াদ তার দুই বছরব্যাপী এই প্রশিক্ষণ চলার মধ্যেই নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চারত শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন।
শুধু সোমবার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাই নয়, অন্যান্য আরও নানান ধরনের অগণতান্ত্রিক কাজের সাথে আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রপাগান্ডা সেল হিসেবে পরিচিত সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তাকে সংস্থাটির অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।
টেক জায়ান্ট মেটা’র গত মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সিআরআই বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় জড়িত বলে প্রতিষ্ঠানটি প্রমাণ পেয়েছে।
মেটা তাদের রিপোর্টে জানায়, সিআরআই এবং আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট মোট ১৪৮টি ফেসবুক পেজ এবং একাউন্ট চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে অপসারণ করা হয়েছে।
এসব পেজ ও একাউন্ট থেকে ভুয়া তথ্য এবং হেইটস্পিচ সম্বলিত কন্টেন্ট নিয়মিত নিজের ফেসবুক এবং টুইটারে শেয়ার করতেন আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ। ফেসবুকের অপসারিত দুটি একাউন্ট (BD Analytica এবং Bangladesh Perspectives) থেকে এরকম শেয়ার করা দুটি উদাহরণ দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আকিব একটি ভুয়া স্ক্রিনশট পোস্ট করেন, যা পরে বার্তা সংস্থা এএফপি ডিসইনফরমেশন হিসেবে চিহ্নিত করে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আকিব ড. ইউনুস, প্রফেসর আলী রিয়াজ, সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলামসহ বাংলাদেশ সরকারের দুর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে খবর প্রকাশ করা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডিসইনফরমেশন ও হেইটস্পিচ সম্বলিত কন্টেন্ট পোস্ট করেছেন।
এর আগে ছাত্রলীগের আরেক সাবেক নেতা এবং সিআরআইয়ের বর্তমান সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদের বিরুদ্ধে ডিসইনফরমেশন ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়ার পর ‘কোনরাড এডেনিয়ার স্কুল ফর ইয়াং পলিটিশিয়ান্স’ এর ২০২১-২২ সালের কোহর্ট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।