Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

পিটিআইকে সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন

বাংলাদেশের অচলাবস্থা নিরসনে ইউনূসকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম

বাংলাদেশের অচলাবস্থা নিরসনে ইউনূসকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে

অমর্ত্য সেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার বন্ধু মুহাম্মদ ইউনূস অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তবে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে তাকে সামনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। 

বাংলাদেশের পরিস্থিতি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে এবং এই পরিস্থিতি কীভাবে দেশটি মোকাবিলা করবে তা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন বলেও উল্লেখ করেছেন অমর্ত্য সেন।   

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের নিজ বাড়িতে বসে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি দেশটির প্রশংসনীয় অঙ্গীকার অব্যাহত রাখা উচিত। 

অমর্ত্য সেন বলেন, বাঙালি পরিচয়ের এক প্রচণ্ডরকম অনুভূতি আমার আছে, যার কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। 

তিনি বলেন, ঢাকায় আমি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি এবং সেখানেই আমার স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল। ঢাকা ছাড়াও আমি প্রায়শই আমার পৈতৃক নিবাস মানিকগঞ্জে যেতাম। মায়ের দিক থেকে আমি নিয়মিত বিক্রমপুর যেতাম, বিশেষ করে সোনারং। আমার কাছে এই জায়গাগুলোর গভীর ব্যক্তিগত তাৎপর্য আছে। অন্য অনেকের মতো বাংলাদেশ কীভাবে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠবে তা নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন।

উল্লেখ্য, শৈশবের অধিকাংশ সময় অমর্ত্য সেন বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কাটিয়েছেন। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি শান্তিনিকেতনে চলে যান এবং নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কুলে পড়াশোনা করেন। 

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশেষ করে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে দেশটির উন্নতির কথা তুলে ধরেন অমর্ত্য সেন। এমনকি এক পর্যায়ে ভারতকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন এবং ভারতের তুলনায় দেশটিতে জন্মহার ব্যাপক হ্রাস পাওয়া এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়ার কথাও বলেন। 

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশেষ করে নারী অধিকারের অগ্রগতিতে, যার পেছনে ব্র্যাক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর অবদান রয়েছে।

সরকার বিরোধী দৃঢ় অবস্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো ‘তুলনামূলকভাবে মুক্ত’ রয়ে গেছে এবং সমৃদ্ধ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

এছাড়া তিনি সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সংযমের প্রশংসাও করেন।

তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে অন্যান্য দলগুলো আওয়ামী সরকারকে যে ভুলের জন্য অভিযুক্ত করেছে, তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে বাংলাদেশের উচিত একসঙ্গে কাজ করার ঐতিহ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। আমি আশা করি স্বাধীনতা এবং বহুত্ববাদের প্রতি বাঙালিদের অঙ্গীকার বজায় থাকবে। আশা করি ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো  অনেকের দাবির চেয়ে দৃশ্যতই অবাধ হবে। পরিবর্তনের সুযোগ আছে। আমি বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত, তবে আমি আশাহীন নই।

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে অমর্ত্য সেন বলেন, ইউনূস আমার পুরোনো বন্ধু। আমি জানি তিনি খুবই সক্ষম এবং নানা দিক থেকে একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার সম্পর্কে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন।

তিনি বলেন, যদি আপনি হঠাৎ করে কোনো দেশের প্রধান হয়ে যান, কার্যতই যেমনটি ইউনূস হয়েছেন, তখন আপনাকে বিভিন্ন দলকে বিবেচনায় রাখতে হবে। ইসলামী দল আছে এবং এখন হিন্দু দলও আছে। তবে ইউনূসের সক্ষমতার প্রতি আমি খুবই আস্থাশীল। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন