Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

দ্য হিন্দুকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়

মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় প্রভাবশালী সাংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের একাধিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। 

এক প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ঢাকা ও দিল্লিতে যে সরকার, যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তা আমাদের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলা উচিত না। কারণ পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক হয়। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দুই পক্ষই বুঝতে পারে তার স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রাখতে পারি। 

এর আগে গত রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওমানের রাজধানী মাস্কটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স) ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে একে অপরকে পারস্পরিক উদ্বেগের কথা জানায় ঢাকা-দিল্লি।

ওই সাক্ষাৎকার কেমন ছিল জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দ্য হিন্দুকে বলেন, (অন্তর্বর্তী সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে) সম্পর্ক খুব উত্তেজনাপূর্ণ ছিল । আমি যেমনটি দেখছি, খুব উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় সেটি শুরু হয়েছিল, কারণ ভারত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করেই সেটি খুব দ্রুত ভেঙে পড়েছিল।

তিনি বলেন, নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়তো কিছুটা সময় লেগেছে। দুই দেশের সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক দৃষ্টি ছিল এবং অবশ্যই অস্বস্তি ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় ছয় মাস পরে প্রকৃতই সেসব শেষ হওয়া উচিত। আমরা যেন একে অপরের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারি আমাদের সেরকম একটি পরিবেশের প্রয়োজন।

সম্প্রতি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকের সময় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। জয়শঙ্করকে সে সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, না। আমি সেটি জিজ্ঞাসা করিনি কারণ তা ভারতের বিষয় (যা তারা অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে)। 

তিনি বলেন, আমি মনে করি না সেটি খুব বেশি উদ্বেগের। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে যা হচ্ছেও। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাণিজ্যে। অল্প সময়ের জন্য বাণিজ্যে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল, কিন্তু তা আবার বেড়েছে। সুতরাং এগুলি দুই দেশের, অন্তত বেসরকারি পর্যায়ে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যে যোগাযোগ করতে চায় তার ইঙ্গিত দেয় এবং আমাদের যে স্বার্থ রয়েছে তাও প্রকাশ করে। উভয় দেশের একে অপরের প্রতি স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের এটির যত্ন নেওয়া দরকার।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম–অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে, দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়, যার বেশির ভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাওয়া প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা ভারতকে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার সেটা না করছে, আমরা আশা করব, তারা অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, যাতে তিনি এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন। 

শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি মব (বিশৃঙ্খল জনতা) কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

সীমান্তে বিএসএফের বাড়াবাড়ি নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ২০২৪ সালে সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করা হয়েছে, যার অর্ধেক বিগত সরকারের আমলে। বিশ্বের আর কোথাও এটা হয়নি। আমি মনে করি, আপনি আমার সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, যেহেতু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, সে কারণে এটা ঘটছে। বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি অপরাধ ঘটে, আপনি তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন এবং আদালতে নিয়ে যান। কারাদণ্ড হোক বা আদালত যেকোনো রায় দিতে পারেন। কিন্তু আপনি তাকে হত্যা করতে পারেন না।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন