সাক্ষাৎকার
নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে সংকট উত্তরণ ঘটতে পারে : ড. ইউনূস
আউটলুক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন চান নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সংকট উত্তরণে জনগণের ম্যান্ডেট দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি এই নির্বাচনের দাবি জানান। এছাড়া বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিদেশিদের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে এই দাবি জানান ড. ইউনূস। ড. ইউনূস বর্তমানে অলিম্পিক গেমসের স্পেশাল গেস্ট হিসেবে প্যারিসে রয়েছেন। সেখানে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুহাসিনী হায়দার।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনুস বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে। জনগণের নির্দেশনায় গণতন্ত্রের সমস্যার প্রতিকার সম্ভব। কারণ, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সরকারে থাকা কিছু মানুষের জন্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ইউনুস বলেন, কারফিউয়ের মধ্যে আমি বিমানবন্দরে গিয়েছি। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম। পরিস্থিতিকে সরকার এমনভাবে দেখাচ্ছে যেন বিদেশি কোনো সেনা বাংলাদেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। তাই বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে রাখতে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীকে বুলেটসহ নামানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের পরাজিত করার মুডে ছিলেন। তারা শৃঙ্খলা ফেরানোর মুডে ছিলেন না। কেন তারা সবরকম বাহিনীকে নামিয়েছে? সরকার কি একটি বিদেশি শক্তি যে বুলেট দিয়ে স্থানীয়দের দমন করছে? তারা তো আপনার নিজের দেশের নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তারা তো সমাজের শীর্ষ শতকরা একভাগ।
ড. ইউনুস বলেন, দেখামাত্র গুলি করা হচ্ছে। সুতরাং এটাই হলো পরিস্থিতি, যা বাংলাদেশে উদ্ভব হয়েছে। তাই আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি অনুরোধ করেছি যাতে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যায়। আমি এ দৃশ্য আর দেখতে পারছিলাম না। বাংলাদেশের মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ সন্ত্রাসের মধ্যে বসবাস করছে। এটা দেখতে পারছিলাম না।
গণতন্ত্রের বিষয়ে ড. ইউনুস বলেন, গণতন্ত্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় জনগণের জীবনে। গণতন্ত্র হলো জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া। সব মানুষকে- ধর্ম, রাজনৈতিক মতামত অথবা অন্য যেকোনো মতবিরোধ থাকলেও তাদের সুরক্ষা দেওয়া হলো গণতন্ত্র। বিক্ষোভকারীরা কাউকে হত্যা করতে যাননি। তাদের দাবি সরকারের জন্য সন্তোষজনক না-ও হতে পারে। কিন্তু তাতেও তাদেরকে হত্যা করার অনুমোদন দেয় না সরকারকে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একটা প্রক্রিয়া আছে। কোথাও বলা নেই, আপনি একের পর এক তাদের হত্যা করতে পারেন। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের হাত তোলা থাকা অবস্থায় তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করতে দেখেছি পুলিশকে। কারণ, এই পুলিশকে গুলি করে হত্যার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র চর্চার মধ্যে কিছু ভয়াবহ ভুল আছে। আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না। আমরা সার্কের সদস্য। আমরা প্রতিবেশী। কী ঘটছে তা দেখতে সব মিডিয়ার আসা উচিত ও দেখা উচিত। সবার আগে তারা (বাংলাদেশ সরকার) যেটা করেছে তা হলো সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে অন্ধকারে তারা সবকিছু ধামাচাপা দিতে পারে। দেশের বাইরে থেকে এমন কি দেশের ভেতর থেকে কেউ যেন কিছু দেখতে না পায়। কেন তারা নিজেদের জনগণ থেকে এত ভীত?
ড. ইউনূস বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবন্ধ। আমরা গণতন্ত্র নিয়েই থাকতে চাই। যদি গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়, তাহলে আপনি আবার জনগণের কাছে তাদের ম্যান্ডেট নিতে যেতে পারেন। সেটা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
ড. ইউনূস, সরকার দাবি করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর অর্থ এই নয়, মৌলিক রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। অস্থায়ী ভিত্তিতে হয়তো থেমে আছে। কিন্তু রাজনৈতিক ইঞ্জিন দৌড়াতেই থাকবে। তা মুহূর্তের নতুন করে শুরু হয়ে যেতে পারে।